May 1, 2023

Variations of Rhythm and the Intricate Rhythmic Patterns in the Songs of Rabindra Nrityanatya

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Pallavi Chatterjee, Research Scholar, Department of Rabindra Sangeet, Rabindra Bharati University

Abstract:

Rabindra Nrityanatyam, a unique dance form inspired by the poetic and musical genius of Rabindranath Tagore, represents a harmonious blend of rhythm, melody, and expressive movements. This abstract explores the rich variations of rhythm and the intricate rhythmic patterns inherent in the songs choreographed for Rabindra Nrityanatyam’s performances. The study delves into the historical and cultural context of Rabindra Nrityanatyam, tracing its roots to Tagore’s vision of a holistic performing arts tradition. A detailed analysis of rhythmic elements within the dance form reveals the nuanced interplay between beats, tala (rhythmic cycles), and laya (tempo). The repertoire of Rabindra Nrityanatyam incorporates a diverse range of musical compositions, each contributing to the mosaic of rhythmic diversity. The abstract dissects specific compositions, emphasizing the incorporation of intricate rhythmic patterns that challenge the dancer’s skill and creativity. The discussion includes the role of percussion instruments, such as the tabla and mridangam, in accentuating and embellishing the rhythmic structure of the dance. Furthermore, the abstract examines the pedagogical aspects of teaching Rabindra Nrityanatyam, focusing on how instructors impart the subtleties of rhythm to aspiring dancers. It explores the use of mnemonic syllables and hand gestures as tools for conveying and internalizing rhythmic complexities. The significance of rhythm in Rabindra Nrityanatyam extends beyond mere technicality; it serves as a vehicle for emotional expression and storytelling. The abstract elucidates how the dance form utilizes rhythm as a narrative device, enhancing the emotive content of the performances. In conclusion, this abstract contributes to a deeper understanding of the variations of rhythm and the intricate rhythmic patterns in the songs of Rabindra Nrityanatyam, shedding light on the fusion of poetry, music, and dance in this unique form of artistic expression.

রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের গানে ছন্দ ও লয় বৈচিত্র্য, পল্লবী চট্টোপাধ্যায়, গবেষিকা, রবীন্দ্র সংগীত বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

রবীন্দ্রনাথের গানের কথা ও সুর ব্যতীত যদি ছন্দ ও লয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাহলে সেখানেও তাঁর গানের ভিন্ন ভিন্ন রূপ চোখে পড়ে। সুরের ক্ষেত্রে যেমন নব নব সুর সংযোজনায় তিনি মেতে থাকতেন, তেমন করেই গানের ছন্দ ও লয় নিয়ে চলত নিরন্তর পরীক্ষা- নিরীক্ষা। ‘সংগীত ও ছন্দ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,

‘কাব্যে ছন্দের যে কাজ, গানে তালেরও সেই কাজ। অতএব ছন্দ যে নিয়মে কবিতায় চলে, তালও সেই নিয়মে গানে চলবে।’

       জীবনের প্রায় শেষ পর্বে এসে শুধুমাত্র নৃত্যকে প্রাধান্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন মূলত তিনটি নৃত্যনাট্য ‘ চিত্রাঙ্গদা’, চন্ডালিকা, শ্যামা। এই নৃত্যনাট্যের গানগুলির সাথে নাচের মেলবন্ধন ঘটালেন নিপুনভাবে এবং ছন্দ ও লয়ের বৈচিত্র্যতা আনলেন নৃত্যনাট্যের গানগুলিতে। যেমন ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যে মণিপুরী খোলের বোলের ব্যবহার করলেন, ‘চন্ডালিকা’য়  মা ও মেয়ের কথোপকথনের এক একটি গানে বিভিন্ন ছন্দের ব্যবহার হল, ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যের গানে ব্যবহার করলেন বিচিত্র লয়। নাটকের ঘটনাবলীর সাথে সাদৃশ্য রেখেই গানগুলির ছন্দ ও লয়ের এই বৈচিত্র্য সাধন করেছিলেন কবি। নৃত্যনাট্যের গানের ছন্দ ও লয় যাতে নৃত্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে সেদিকে কবির সতর্ক দৃষ্টি ছিল। এই আলোচনায় নৃত্যনাট্যের গানে ছন্দ ও লয়ের যে বিচিত্র প্রয়োগ করলেন রবীন্দ্রনাথ তাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।

       প্রথমেই ‘ চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের কথা আলোচনা করা যেতে পারে। ১৯৩৬ সালে কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ যখন নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’য় রূপান্তরিত হল, তখন নৃত্যনাট্যের গানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনলেন রবীন্দ্রনাথ। নৃত্য সংযোজনায় ব্যবহার করেন মণিপুরী নৃত্য সেভাবেই নৃত্যনাট্যের অনেক অংশে মণিপুরী খোলের বোল বা ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। যেমন অর্জুনের ধ্যানভঙ্গের দৃশ্যে মণিপুরী খোলের  তেহাই তেরাপরণ বাদন রীতির ব্যবহার ছিল। এই নৃত্যনাট্যের ‘ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে শুনি/ অতল জলের আহ্বান’- গানটির উল্লেখ করে প্রতিমা দেবী লিখেছেন,

 ‘ এই স্নানের নাচের মধ্যে মণিপুরী, কাওয়ালী চারতাল ও মাদ্রাজী তেওড়া ও দাদরা তালের মিলন ঘটেছে। এই দুই নাচের সংযোগে দেখা গেল ভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে আর অবিচিত্র তালের অবসাদ কেটে গিয়ে নতুন উদ্দীপনা এনেছে।……চিত্রাঙ্গদা যখন মদন দেবতার পূজার আয়োজনের জন্য ফুল তোলবার আদেশ করছেন কিংবা শিকারের নাচে অর্জুনকে দেখে তার মানসিক পরিবর্তন হওয়াতে সখীদের বনভূমি হতে বিদায় দিচ্ছেন, এইসব জায়গাগুলিতে তালের মধ্য দিয়ে ভাবের প্রকাশ হয়েছে।’

নৃত্যনাট্যে শুধুই নৃত্যের ছন্দকে প্রাধান্য দেবার জন্য একই গানে বিভিন্ন তালের মিশ্রণ এবং খন্ড খন্ড তালের ব্যবহারও করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। উদাহরণ সহ বিষয়টিকে দেখানো যেতে পারে। নৃত্যনাট্যের শুরুর গান-

‘ গুরু গুরু গুরু গুরু

ঘন মেঘ গরজে পর্বতশিখরে,

অরণ্যে তমশ্ছায়া।

 মঞ্চের নেপথ্য থেকে গানটি গাওয়া হত, তারপর তালবাদ্যের বোলের সাথে চিত্রাঙ্গদা ও সখীগণের প্রবেশ ঘটত। এছাড়া ‘স্বপ্নমদির নেশায় মেশা’ , ‘সন্ত্রাসের বিহ্বলতা’ গানগুলিতেও তালের নৃত্য ব্যবহৃত হত। উল্লিখিত গানগুলি ছাড়াও নৃত্যনাট্যের আরো অনেক গানে তালের বৈচিত্র্য এবং খন্ড তাল রীতি প্রযুক্ত হত।

 চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যেও বেশ কিছু গানে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে, ঝোঁক দিয়ে একই কথার তিনবার উচ্চারণ লক্ষ্য দেখা যায়, যা নৃত্যের তেহাই রীতির কথা মাথায় রেখেই কবির সৃষ্টি করেছিলেন বলে মনে করা যেতে পারে। এ ধরনের কিছু গান যেমন-

  • ঢেউ দিল ঢেউ দিল ঢেউ দিল আমার মর্মতলে
  • মন রয় না , রয় না , রয় না ঘরে
  • দিয়ো দিয়ো দিয়ো ঘুচায়ে

নৃত্যনাট্যের গানের বৈশিষ্ট্য হল, সেগুলি ভাবের এবং নৃত্যের প্রয়োজন অনুসারে বাঁধা তালে গাইতে হয়। কোন গান কোন লয়ে গাইলে নাটকের উপযুক্ত ভাব ফুটে ওঠে তা নৃত্যনাট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের গানগুলিতে বিলম্বিত, মধ্য, দ্রুত তিনপ্রকার লয়ের ব্যবহারই লক্ষ্য করা যায়। দৃশ্য অনুযায়ী নৃত্যনাট্যের গানের লয়ের একটি তালিকা দেওয়া যেতে পারে।

প্রথম দৃশ্য-

মোহিনী মায়া এল               –  মধ্য

গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ     –  দ্রুত

হা হতভাগিনী, এ কী অভ্যর্থনা   –  বিলম্বিত

প্রথম দৃশ্যের অধিকাংশ গানই চার মাত্রার ছন্দে গাঁথা।

দ্বিতীয় দৃশ্য-

শুনি ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে- মধ্য

আমি তোমারেই করিব  – বিলম্বিত

আমার এই রিক্ত ডালি  –  মধ্য

তৃতীয় দৃশ্য-

স্বপ্নমদির নেশায় মেশা         –       দ্রুত

তুমি অতিথি                  –       মধ্য

ক্ষমা করো আমায়             –     বিলম্বিত

চতুর্থ দৃশ্য

ভষ্মে ঢালে ক্লান্ত হুতাশন      –     মধ্য       

কেন রে ক্লান্তি আসে         –     বিলম্বিত

হো এল এল এলরে         –      দ্রুত

কি ভাবিছ নাথ                –    মুক্তছন্দ

পঞ্চম দৃশ্য

লহো লহো  ফিরে লহো     – দ্রুত

বিনা সাজে সাজি         –   মধ্য

ষষ্ঠ দৃশ্য

এসো এসো পুরষোত্তম –  মধ্য

আমি চিত্রাঙ্গদা         – বিলম্বিত

তৃষ্ণার শান্তি          –  দ্রুত

 লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি দৃশ্যের গানেই তিন প্রকার লয়ের ব্যবহার হয়েছে। এছাড়াও নৃত্যনাট্যের বেশ কয়েকটি গানে মিশ্র লয়ের ব্যবহারও দেখা যায়, যেমন প্রথম দৃশ্যের ‘ বঁধু কোন আলো লাগল চোখে’- গানটির প্রথম অংশ তাল ছাড়া গেয়ে ‘ অস্ফুট মঞ্জরী’ অংশ থেকে প্রথমে বিলম্বিত পরে আবার দ্রুত লয়ে গেয়ে শেষের অংশ পুনরায় বিলম্বিত লয়ে গাইতে হয়। তৃতীয় দৃশ্যের প্রথম গান- ‘আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায় বাঁশি’ প্রথম অংশ বিলম্বিত লয়ে এবং ‘সহসা মনে জাগে আশা’ অংশ থেকে শেষ পর্যন্ত দ্রুত লয়ে গাওয়া হয় এবং ফেরা হয় বিলম্বিত লয়ে।

       গদ্যনাটক ‘চন্ডালিকা’কে নৃত্যনাট্য চন্ডালিকার রূপে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। এই রূপান্তরকালে রবীন্দ্রনাথ মূলত গদ্যে সুর সংযোজন করেছিলেন। সুরকে সংলাপের বাহন করে সংলাপকে পরিণত করলেন গানে। সেই ধারায় কথাকে অর্থাৎ গদ্যেকে সুরময় সংলাপে পরিণত করার ফলে সুরের প্রয়োজনেই কথার বিন্যাস পরিবর্তিত হয়েছে। এখানেও নৃত্যের প্রয়োজনে একাধিকবার গানের ছন্দ ও লয়ের পরিবর্তন হয়েছে। চন্ডালিকার গানেও নৃত্যের তেহাই রীতির অনুকরণে কোন শব্দ তিনবার ব্যবহার করার রীতি প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। যেমন-

  • দই চাই গো দই চাই, দই চাই গো,
  • কেন দেব ফুল, কেন দেব ফুল, কেন দেব ফুল
  • নতুন জন্ম , নতুন জন্ম, নতুন জন্ম আমার
  • তবু প্রণাম, তবু প্রণাম, তবু প্রণাম
  • আনবই, আনবই, আনবই তারে মন্ত্র পড়ে।

চন্ডালিকা নৃত্যনাট্যের গানেও লয়ের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি গানের কথা বলা যেতে পারে। প্রথম দৃশ্যের –

‘ আমার মালার ফুলের দলে’ গানটি যথাক্রমে মধ্য-দ্রুত-বিলম্বিত-দ্রুত এই লয়ে গাওয়া হয়। ‘যে আমারে পাঠালো এই…’ গানটি বিলম্বিত-দ্রুত-বিলম্বিত-বিলম্বিত-বিলম্বিত এই লয়ে গাওয়া হয়। প্রকৃতি ও মায়ের অধিকাংশ কথোপকথনের গানেই লয়ের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।

মাঃ ‘তুই অবাক করে দিলি আমায়’- দ্রুত

প্রকৃতিঃ হ্যাঁ মা আমি বসেছি- বিলম্বিত

মাঃ তোর সাধনা কাহার জন্যে- দ্রুত

কিছু গানের ছন্দ কথ্য ভাষার ছন্দের মতো গাওয়া হয়েছে। মায়ের কথার উত্তরে প্রকৃতি যখন গেয়ে ওঠে

‘ হ্যাঁ গো মা সেই কথাই তো বলে গেলেন তিনি

তিনি আমার আপন জাতের লোক।

আমি চন্ডালী সে যে মিথ্যা সে যে মিথ্যা

সে যে দারুণ মিথ্যা।’

তখন তাকে শুধুই গান বলে আখ্যা দেওয়া যায় না। তাতে কথ্যভাষার এক রূপ ফুটে ওঠে। ভাঙা ছন্দে গাওয়া হয় গানটি। তাই এ জাতীয় গানের লয়ও ওঠানামা করে। নাটকীয় ভাব বজায় রাখতে গিয়ে গানের লয় এক রাখা সম্ভব হয় না। নৃত্যনাট্যের শেষে যখন নাটকীয় ভাব ঘনীভূত হয়ে ওঠে তখন অধিকাংশ গানের লয় দ্রুত হয়ে যায়। যেমন-

  • অঙ্গ ঘিরে ঘিরে তাঁর অগ্নির আবেষ্টন,
  • জাগেনি এখনো জাগে নি
  • ঐ দেখ এল ঝড় এল ঝড়

অন্যান্য নৃত্যনাট্যের তুলনায় চন্ডালিকা নৃত্যনাট্যের ছন্দ ও লয়ের বৈচিত্র্য অধিক লক্ষ্য করা যায়। প্রকৃতি ও মায়ের কথপোকথনের মধ্যেই ঘটনার দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে এবং মা ও মেয়ের মানসিক অবস্থান ছন্দ ও লয়ের বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে নৃত্যনাট্যে ব্যবহৃত তালগুলি নাটকীয় প্রয়োজনে ভেঙে গাইতে হয়েছে। নৃত্যনাট্যের গানে যে তালগুলি অধিক ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলি – দাদরা,তেওড়া, কাহারবা, ধাঁপতাল,ঝম্পক ইত্যাদি।

১৯৩৯ সালে ‘পরিশোধ’ নাট্যকাহিনী শ্যামায় রুপান্তরিত হবার সময় সমগ্র নৃত্যনাট্যটি রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই প্রযোজনায় প্রথম অনেক প্রকার বোলের নাচ যুক্ত হয়েছিল। তাল বাদ্যে বোলের সাথে হত্যার দৃশ্য নাটকটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।শ্যামার উত্তীয়কে হত্যার দৃশ্যে তালবাদ্যের প্রয়োগ করা হয়। উত্তীয় ও কোটালের নৃত্যে তেহাই বোল যন্ত্র সংগীতের মাধ্যমে রচনা করা হয়। গানের কোন প্রকার সমস্যার জন্য নাচের যাতে কোন ত্রুটি না হয় সেদিকে কবির ছিল সজাগ দৃষ্টি । শান্তিদেব ঘোষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন,বসন্তের উচ্ছাস প্রকাশ করার গান যেন উপযুক্ত তালে নিবদ্ধ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ কখনোই চাননি গানের ছন্দ বা লয় নৃত্যনাট্যের নাচে ব্যঘাত সৃষ্টি করে। তাই বিশেষত নৃত্যনাট্যের গানে লয়ের ক্ষেত্রে কবির ছিল সর্তক দৃষ্টি। চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই গানের লয়গুলি নির্বাচন করা হয়েছিল। দৃশ্য অনুসারে গানের লয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথম দৃশ্যের অধিকাংশ গানগুলি অধিকাংশ মধ্য লয়ে গেয়।

  • তুমি ইন্দ্রমনির হার
  • না না না বন্ধু
  • জানি জানি তাইতো আমি…
  • থামো থামো কোথায় চলেছ পালায়ে…-দ্রুত লয়
  • আমি বণিক – মধ্য লয়
  •  খোলো খোলো বৃথা খোলো খোলো বৃথা করো না পরিহাস – দ্রুত লয়

লক্ষ্য করা প্রয়োজন এই দৃশ্যে কোটাল ও বজ্রসেনের কথপোকথনে কোটালের অংশটি ঝোঁক দিয়ে গাওয়া হয়। কিন্তু বজ্রসেনের কন্ঠের গানগুলি মধ্য লয়ে গেয়।

এর পর দ্বিতীয় দৃশ্যের গানগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অধিকাংশ গানই মধ্য লয়ে গাওয়া হয়।দ্বিতীয় দৃশ্যের কয়েকটি গানের লয়ের একটি তালিকা দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় দৃশ্যের সূচনার গান-

  • ‘ হে বিরহী, হায়, চঞ্চল হিয়া তব-’ বিলম্বিত লয়ে  অথবা বিনা তালে গাইতে হয়।
  • ফিরে যাও কেন ফিরে ফিরে যাও – মধ্য লয়ে
  • মায়াবনবিহারিণী হরিণী- মধ্য লয়ে

সখীদের কন্ঠে

  • হতাশ হোয়ো না হোয়ো না,- অপেক্ষাকৃত দ্রুত লয়ে গেয়।
  • জীবনে পরম লগন – মধ্য লয়
  • ধরা সে যে দেয় নাই- দ্রুত ও মধ্য লয়
  • নাম লহো দেবতার- মধ্য লয়ে গেয়

তৃতীয় দৃশ্য-

  • বাজে গুরু গুরু- মধ্য লয়
  • আহা এ কি আনন্দ- দ্রুত লয়
  • জেনো প্রেম চিরঋণী – মধ্য লয়

চতুর্থ দৃশ্য-

  • পুরী হতে পালিয়েছে- মধ্য লয়
  • দাঁড়াও কোথাও চলো- দ্রুত লয়
  • তোমা লাগি যা করেছি- বিলম্বিত লয়
  • ক্ষমা করো নাথ – প্রথম চরণ বিনা তালে এবং শেষ অংশে লয় সামান্য বেড়ে মধ্য লয়ে গেয়।
  • এ জন্মের লাগি- দ্রুত লয়

এখানে বজ্রসেনের কন্ঠে গানগুলি সবই দ্রুত ও মধ্য লয়ে গেয় এবং শ্যামার কন্ঠে গানগুলি বিলম্বিত লয়ে গাওয়া হয়। এসময় শ্যামা তার দোষ স্বীকার করে নেয় তার অন্তরে আত্মগ্লানির উদ্ভব হয় সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ  গানগুলিতে লয়ের এই বৈচিত্র্যতা এনেছিলেন। চতুর্থ দৃশ্যের শেষে ‘ক্ষমিতে পারিলাম না’ গানটিও দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনা তালে গাইলেই তার ভাব সঠিক ফুটে ওঠে।

ইউরোপীয় Dance Drama র অনুকরণে নৃত্যনাট্যের ধারা সূচনা করলেও সেই নৃত্যনাট্যের আদর্শে আমূল পরিবর্তন আনলেন কবি। ‘ছন্দ’ প্রবন্ধে কবি লিখেছিলেন,

‘আমরা ভাষায় বলে থাকি, কথাকে ছন্দে বাঁধা। কিন্তু এ কেবল বাইরে বাঁধন, অন্তরে মুক্তি। কথাকে তার জড়ধর্ম থেকে মুক্তি দেবার জন্যেই ছন্দ। সেতারের তার বাঁধা থাকে বটে কিন্তু তার থেকে সুর পায় ছাড়া। ছন্দ হচ্ছে সেই তার-বাঁধা সেতার, কথার অন্তরের সুরকে সে ছাড়া দিতে থাকে।’

এই ছন্দ ও লয়েই কবি তার গানে মুক্তির সন্ধান করেছেন। জীবনের শেষ পর্বে রচিত এই নৃত্যনাট্যের ধারায় কবি নিজেকে প্রকাশ করেছেন বাধাহীন ভাবে। সুর তার হাত ধরেছিল বাল্যকালেই এরপর সুরের সহযোগী নাচের ভাষাকে নাটকের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন এই পর্বে।

তথ্যসূত্র

১। https://www.tagoreweb.in/Essays/chhanda-125/sangeet-o-chhando ২। প্রতিমা দেবী, ‘ নৃত্য’, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ,কলকাতা, ১৪০০, পৃষ্ঠা- ২৫

৩।https://tagoreweb.in/Essays/chhanda-125