May 1, 2023

Exploring the Impact of Rabindranath Tagore’s Songs on the Cognitive and Emotional Development of Children: A Psycholinguistic Analysis

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Gitanjali Ghosh

Abstract:

Rabindranath Tagore, a multifaceted luminary in the realm of literature, music, and education, crafted a profound legacy that continues to shape cultural landscapes. This abstract delves into the intricate connection between Tagore’s songs and the development of children’s minds. Tagore, the Nobel laureate poet, musician, and philosopher, had a unique ability to capture the essence of human emotions and societal nuances in his compositions. This study investigates how Tagore’s songs, especially those designed for children, catalyze cognitive, emotional, and social development in young minds. Through an interdisciplinary lens, it explores the lyrical and melodic elements that contribute to the aesthetic appeal and educational value of Tagore’s compositions. The intricate blend of poetry and music in his songs creates a rich sensorial experience, fostering creativity and imagination in children. Furthermore, the study examines the philosophical underpinnings of Tagore’s educational philosophy, emphasizing the integration of art and culture in the learning process. Tagore believed that education should nurture the complete development of an individual, and his songs reflect this ethos by addressing themes of nature, morality, and the human experience. Analyzing the impact of these themes on children’s minds provides insights into the potential of Tagore’s music to instill values and stimulate critical thinking. The research draws on qualitative methods, including content analysis and interviews with educators and parents, to understand the real-world implications of incorporating Tagore’s songs into children’s learning environments. By exploring the reception and interpretation of Tagore’s music in contemporary educational settings, this study aims to contribute to the discourse on the role of arts in shaping the minds of the younger generation. In conclusion, this abstract sets the stage for an in-depth exploration of how Rabindranath Tagore’s songs serve as a cultural and educational resource, influencing the cognitive and emotional development of children. The study aims to shed light on the enduring relevance of Tagore’s musical legacy in nurturing well-rounded individuals in today’s dynamic and diverse educational landscapes.

       শিশু মন ও রবি ঠাকুরের গান : একটি মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ

গীতাঞ্জলি ঘোষ,   অধ্যাপিকা, মেমারি কলেজ, পূর্ব বর্ধমান।

       

      

         ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ ছন্দের দোলা, যুগ ও কালের গণ্ডিকে অতিক্রম করে শিশু মনের উপযোগী গান, ছড়া গানের নতুন শিশু যুগের সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্য, সংগীত সৃষ্টির আদিকাল থেকে কোথাও কোনো রূপে শিশু মনের উপযুক্ত সহজ সরল প্রাণোচ্ছল ভাষাযুক্ত গান তৈরি হয়নি, তাই রাবীন্দ্রিক  পৃষ্ঠপোষকতায় সূচনা হল নব্য শিশু যুগ। তিনিই এই যুগের সৃষ্টিকর্তা।

          আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘শিশুমন ও রবি ঠাকুরের গান-কবিতা’। ‘সংগীত চিন্তা’ গ্রন্থে কবিগুরু লিখেছেন- “কবে যে গান গাহিতে পারিতাম না তাহা মনে পড়ে না। মনে আছে বাল্যকালে গাঁদা ফুল দিয়া ঘর সাজাইয়া মাঘোৎসবের অনুকরণে আমরা খেলা করিতাম। সে খেলায় অনুকরণের আর-আর সমস্ত অঙ্গ একেবারেই অর্থহীন ছিল, কিন্তু গানটা ফাঁকি ছিল না”।[1]  ছোট বাচ্চারা গান-বাজনা শিখুক এই ইচ্ছা বাড়ির সকল মানুষেরই থাকে কিন্তু তারা কি গাইবে, কি ধরনের গান গাইবে, কেমন করে গান গাইবে, তা নিয়েই সৃষ্টি হতো বা এখনো হয় জটিলতা। প্রায় সকলেই বলবেন সরগম সাধবে, তাল, লয় বুঝবে, রাগ কেন্দ্রিক গান শিখবে। স্বর সাধনার কঠিন একঘেয়ে পথে জোর করে শিশুদের মন বসানোর চেষ্টা আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে (তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কিছু শিশুর প্রতিভার সাক্ষর মেলে)। শিশুদের নিকট এই সাধনার পথ অতীব দুর্গম, তারা সংগীতের মিষ্ট রস অনুভবের আগেই তিক্ততায় অতিষ্ট হয়ে দিকভ্রষ্ট হতো ও বর্তমানেও হয়। এখানেই বোধহয় কবিগুরুর সার্থকতা– ছোট্ট শিশুদের কাছে ‘তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা…..’ অথবা ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে……’ এর মধ্য দিয়ে তাদের শিশুমনের খোরাক রঙিন কল্পনা জগতের সাথে সুর লয় ছন্দকে ‘মাতৃদুগ্ধের’ ন্যায় সহজ পাঠ করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে সত্য তা হলো ‘গানের ভাষা আনন্দের ভাষা’, ‘গানের ভাষা মন উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভাষা’। শিশুরা তোতাপাখি যা দেখে যা শুনে, তাই শেখে ও তাই বলে। তাই দুরহ ব্যাকরণকে(সরগম) কন্ঠস্থ করতে গিয়ে একাধিক ভুল ভ্রান্তির শিকার হয়ে ‘ভুলে ভরা ভোলানাথ’ হোক এটা কবিগুরু কখনো চাননি। তাই সহজ সরল পদ্ধতি অর্থাৎ প্রানোচ্ছলতা, শব্দের উজ্জ্বলতার এবং সঠিক শব্দ চয়ন, সুর, ছন্দকে একত্রিত করে শিশুমনে একলহমায় স্থান করে নিয়েছিলেন– তৈরি হয়েছিল-

“এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার….”

“আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা….”

“হারে রে রে রে রে, আমায় ছেড়ে দেরে দেরে–”   – ইত্যাদি

          রবীন্দ্র যুগের পূর্বে শিশু সাহিত্য বলে কিছু ছিল না, যা ছিল নিতান্তই নগণ্য। সেসময়ের গানগুলি ছিল ছোট মুখে বড় কথার মত বেমানান। আর শিশুদের আত্মস্থ করা ছিল তত ধিক দূরহ। যেমন দেহতত্ত্ব, স্বদেশী, কীর্তন, রামপ্রসাদী প্রভৃতি এছাড়াও ছিল নানা যাত্রার গান, টপ্পা, শাস্ত্রীয় সংগীত প্রভৃতি। এই সমস্ত কঠিন গানগুলোই শিশুদের গাইতে হতো। এই বন্ধন কে ছিন্ন করে “আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে”-র মধ্য দিয়ে শিশু মনকে উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে কবিগুরু শিশুদের উপহার দিলেন তার ছড়া গান ও কবিতার ঝুলি-

“আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি…”

“হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচে রে।….”

“আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে…”

“ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে….”   -প্রভৃতি ।

নিজের শৈশবকে সমগ্র শিশুকুলের শৈশবেতে একাত্ম করে লিখলেন “জীবনস্মৃতি”। সমস্ত রুক্ষতা, কাঠিন্য কে শিশু মন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘শিশু’, ‘পাতা’, ‘বীরপুরুষ’, ‘খাপছাড়া’, ‘বাচস্পতি’, প্রভৃতি রচনা করলেন। শিশুরা পারিবারিক পরিবেশে যেমন বেড়ে ওঠে তেমনি গাছপালা, ফুল ফল, নদী নালা ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও তাদের আকর্ষণ করে। বাইরের জগত দেখার জন্য, ফুলের বাগানে ছুটবার জন্য, গাছে চড়বার জন্য, বৃষ্টিতে ভেজবার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। তাই শিশুদের মনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন নানান রকম প্রকৃতির গান যা গাইতে প্রকৃতির রূপটি অনুভব করতে পারা যায়। তার মধ্যে কত রকমের সুরের খেলা, কত রকমের ছন্দের মেলা- রঙের মেলা। যেমন উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি –

“এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার….”

“আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা….”

“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা….”   – প্রভৃতি।

প্রথাগত শিক্ষা যখন করাল থাবা বসাচ্ছে শিশুমনে, তখন তিনি পাঠশালা বিমুখ শিশু ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য তৈরি করলেন শান্তিনিকেতন – ” দশটা পাঁচটা আন্দামানের” পাঁচিলকে ভেঙে দিয়ে সেদিন কচিকাঁচারা গেয়েছিল-” আমাদের শান্তিনিকেতন আমাদের সব হতে আপন”। নিজের সৃষ্টিকে শ্রদ্ধা জানাতে একদা কবিগুরু বলেই ফেললেন “ইস্কুল পালানো ছেলের ইস্কুল”। শিশুদের হৃদয়কে অনুভব করে তাই তিনি বললেন ‘মাগো আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা’। সেজন্য শিশুদের খুশিটুকুই শান্তিনিকেতনের শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে রাখবার চেষ্টা করেছেন রবীন্দ্রনাথ- ছেলেমেয়েদের উপর কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে চাননি। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র রকমের খেলাধুলা, গান বাজনা, ভ্রমণ ইত্যাদি আয়োজন করেছেন। তাই তো শিশুরা ” মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ” বলে মনের আনন্দে নেচে ওঠে।

পরিবেশ, জলবায়ু, আবহাওয়া, ঋতু প্রভৃতিকে শিশুদের সচেতনতার সাথে হৃদয়ের অন্তরে গেঁথে দেওয়ার জন্য তিনি বেশ কিছু শিশু হৃদয় স্পর্শকারী গান রচনা করেছেন। যেমন–

গ্রীষ্মের জন্য — ‘এসো হে বৈশাখ…’

বর্ষার জন্য — ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে…’ ও ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে…’

শরতের জন্য — ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি…’ ও ‘শিউলি ফুল শিউলি ফুল…’

হেমন্তের জন্য — ‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে….’

শীতের জন্য — ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়…’

বসন্তের জন্য — ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান…’ ও ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে..’

এভাবেই তিনি প্রকৃতি প্রেমের ইতিহাস রচনা করেছিলেন শিশু মন সহ সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে।

শিশুদের স্বচ্ছন্দ, স্বাধীনতার বিকাশ এবং পূর্ণতা ও মনুষ্যত্বের সার্বিক বিকাশের জন্য তিনি ছিলেন সদা জাগ্রত। সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, বর্ণ-বৈষম্য, নীচহীন মানসিকতাকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে যাতে কোনোভাবে শিশু মনকে কলুষিত করতে না পারে, তার জন্য তিনি একাধিক প্রচেষ্টা করেছেন ছোটগল্প ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘ছুটি’, ‘পোস্টমাস্টার’ প্রভৃতির মাধ্যমে। একাধিক কাব্যগ্রন্থ যা শিশু মনকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয় তা হল ‘রাজার বাড়ি’, ‘পরী’, ‘তোতাকাহিনী’, ‘ছড়ার ছবি’, ‘সহজপাঠ’ প্রভৃতি। ছোটদের নাটক ” ডাকঘর”-এর ‘অমল ও দইওয়ালা’ যা প্রত্যেকটি শিশুকে ‘পাঁচ মুড়ো পাহাড়ের তলায় শ্যামলী নদীর ধারে’ নিয়ে যায় এখানেই সার্থকতা কবিগুরুর। তিনি এতটাই যত্নশীল ছিলেন যে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ভেবেছিলেন যে শিশুরা শুধু বড়ই হবে না, গড়ে উঠবে রুচিতে, কর্মে, চিন্তায়, সংস্কৃতিতে। আত্মপ্রকাশ করবে “নবভারত” এই ‘সবুজের অভিযান’-এর মধ্য দিয়ে।

রবীন্দ্রনাথের গান, সুর আর কথার মধ্যে অদ্ভুত একটা জোর আছে। ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা’ কে পুড়িয়ে ফেলতে পারে, ভীরু কাপুরুষও নিজ শিরদাঁড়ায় বলিয়ান হয়ে গাইতে পারে ‘নাই নাই ভয় হবেই হবে জয়’। তাইতো শিশু ভয়ডর হীন হয়ে ‘হারে রে রে রে’ করে পথ চলা শুরু করে ‘নব ভারতে’র তরে। তার নাটক বা নাটিকায় অভিনয় করতে গিয়ে মনে হবে না যে অভিনয় করছে। শিল্পী কথা ও গানে এমনভাবে মশগুল হয়ে পড়বে যে, মনে হবে এ যেন তার নিজেরই কথা, আর এটাই একটা শিশু পাঠক, শিশু শিল্পী বা ছাত্র-ছাত্রীর কাছে অমৃত পান স্বরূপ। রবি ঠাকুর জীবিত অবস্থায় কচিকাঁচাদের নিয়ে অভিনয় করেছিলেন, খুলে দিয়েছিলেন শিশু হৃদয়ের দ্বার ‘খোল দ্বার খোল’ এর মধ্য দিয়ে। তিনি সমগ্র শিশু সমাজকে ময়ূরের পেখমের অপরূপ রূপের ন্যায় মানবতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সম্প্রদায়িকতা মুক্ত প্রাণোচ্ছ্বাসে পূর্ণ ভারতবর্ষ ও সমাজ গঠনের জন্য উদাত্তকণ্ঠে আহ্বান জানান —

” পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে

মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।[2]

তথ্যসূত্র


[1] [ সংগীত চিন্তা:- আত্মকথা; জীবনস্মৃতি ও ছেলেবেলা- পৃষ্ঠা ১৭৫ ]

[2] https://www.tagoreweb.in/Verses/chaitali-30/bangamata-1865