May 1, 2022

Indian Ghazal through the Melodic Tapestry of Begum Akhtar

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Anindya Banerjee

Abstract: This study delves into the captivating world of Indian Ghazal, a poetic and musical genre that transcends boundaries, resonating with the deepest sentiments of the human soul. Focusing on the iconic figure of Begum Akhtar, a legendary Ghazal singer whose artistry left an indelible mark on the cultural landscape of India, the research examines the historical roots, evolution, and unique characteristics of the Ghazal tradition. Begum Akhtar, often referred to as the “Queen of Ghazal,” emerges as a central figure in this exploration, her sublime renditions serving as a lens through which we gain insights into the rich tapestry of emotions woven into the fabric of Ghazal. The paper navigates through the cultural and linguistic diversity of Ghazal poetry, highlighting its themes of love, pain, and mysticism, and how these themes find expression in the haunting melodies and poignant renditions of Begum Akhtar. Additionally, the study sheds light on the socio-cultural impact of Begum Akhtar’s contributions, her role in popularizing Ghazal among diverse audiences, and her influence on subsequent generations of artists. Through a blend of historical analysis, musical critique, and cultural examination, this research aims to deepen our understanding of the profound connection between the poetic artistry of Ghazal and the timeless legacy of Begum Akhtar in the musical heritage of India.

ভারতীয় গজল ও বেগম আখতার, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কবিতার চেহারায় ‘গজল’-এর আবির্ভাব ঘটেছিল পারস্যে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে। পারস্যে সৃষ্টি হলেও ভারতীয় গজল-এর এক নিজস্ব চরিত্র নির্মিত হয়েছে, যার শিকড় রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। ‘গজল’ প্রকৃত অর্থে উর্দুতে লেখা কবিতা, আর তা শিবিরের ভাষা হিসেবে উর্দুর জন্ম হয়েছিল এই ভারতেই। “উর্দু’ তুর্কি ভাষার একটা শব্দ, যার সহজ অর্থ ‘সৈন্যদের বাজার’। বলাই বাহুল্য, উর্দু ভাষার বিকাশের স্থানও এই ভারতবর্ষ। কথ্য উর্দুর শরীর নির্মিত হয়েছে হিন্দি, তুর্কি, আরব্য ও পারস্যদেশীয় শব্দের মিশ্রণে। জনপ্রিয় ভাষা হিসেবে উর্দু ভাষার বিশেষ প্রচলন ঘটেছিল যখন মুঘল বাদশাদের শাসন ভারতে কায়েম ছিল। আরও বিশ্লেষণ করে বললে, মুঘলদের সেই গৌরবময় শাসনকালেই উর্দু ভাষা হিসেবে এক মাধুর্যময় পরিণত চেহারা পেয়েছিল।

ইতিহাসের সেই আলোছায়ার দিনগুলোতে প্রামাণ্য রচনার প্রশ্নে প্রথম গজল লিখেছিলেন আমীর খসরু। সেটা ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঘটনা। চরিত্র ও শরীরের প্রশ্নে গজল দুটো সংস্কৃতির সহজভাবে সংযুক্ত হওয়া, দুটো ভাষায় তা প্রকাশিত। গজলের অর্ধাংশ পারস্যের ভাষা, অন্য অংশটা ছিল ব্রিজভাষা। এবং সেইভাবেই দুটো অংশে ভেঙেই গাওয়া হত তখন। কালের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত গুণীদের কৃতিত্বে উর্দু গজল পরিণত ও শিল্পময়। সঙ্গীতের চেহারা পেল ১৮ ও ১৯ শতকে। সেই পরিণত, জনপ্রিয় গজল প্রধানত বিকশিত হয়েছিল লক্ষ্ণৌ ও দিল্লিতে।

ভারতীয় সঙ্গীতে ধ্রুপদ, ধামার খেয়াল, ঠুমরি যেভাবে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পীরা পরিবেশন করতেন বা স্বীকৃতি পেত, গজল গানকে সেই প্রাধান্য বা ততটা স্বীকৃতি দেওয়া হত না যতদিন না শ্রোতারা বেগম আখতার পরিবেশিত গজল গান শুনলেন। বেগমের গানের পরিবেশন এমনই উন্নতমানের এবং নান্দনিক ছিল যে, উনি গজল গানকে উল্লিখিত গানগুলির সমপর্যায়ে উন্নীত করেন। গজল গানে একটা আলাদা মাত্রা এনে দেন। ওঁর পরিবেশনের পর থেকে গজল গানও একক এবং অন্যতম প্রধান সঙ্গীত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বেগম আখতারের সমসাময়িক ও পরবর্তী প্রজন্মের গান উচ্চমানের হলেও ওঁর গাওয়া গজল এক অনন্য রূপ ধারণ করত। তার প্রধান কারণ ওঁর কণ্ঠস্বর, যেটাকে সাঙ্গীতিক ভাষায় গলার আঁশ বলা হয়ে থাকে। সেই কণ্ঠস্বরের পেছনে ছিল ওঁর আবেগ এবং আকুতি, যাতে থাকত একটা সূক্ষ্ম বা প্রচ্ছন্ন যৌনতার আবেদন। ওঁর মতন গায়নশৈলী ও পারদর্শিতা অনেকের মধ্যে থাকলেও প্রতিটি উর্দু শব্দের অর্থ এবং তার কাব্যগুণকে মাথায় রেখে সহজ-সরল উচ্চারণ করে যেভাবে উনি গজল পরিবেশন করে গেছেন তেমনটি অন্যদের গজল গানে সেইভাবে পাওয়া যায়নি। এই কারণেই তিনি ছিলেন একজন কালজয়ী ব্যতিক্রমী গজল শিল্পী।

মূল আরবি শব্দ গাজাল (Ghazaal) থেকে প্রত্যয়সিদ্ধ শব্দ হিসেবে পরিচিত হল ‘গজল’ (Ghazal) নামে। এর প্রকৃতিগত অর্থ হল একজনের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে আলাপ করা। গজল-এ বিষাদসিক্ত স্বর থাকা যেমন খুবই জরুরি, তেমন জানাতেই হবে। সেই মুহূর্তে প্রেমিক বা প্রেমিকা ঠিক কোন মানসিক অবস্থায় আছে। ঐতিহ্যগতভাবে গজল-এ নিদারুণ মনস্তাপও জানানো হয়। অতীতে গজল গান হিসেবে পরিবেশন করতেন স্বয়ং গজল রচয়িতা কবিবৃন্দ। এখনও এদেশের অনেক আসরে, অর্থাৎ মুশায়েরায় সেইভাবেই গাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সঙ্গীতজগতে, গজল পরিবেশন করেন। তাঁরাই যাঁরা সভানতকী বা পতিতা ছিলেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শুরু ও মাঝামাঝি সময়ে সুপরিচিত গজল গায়ক-গায়িকা হিসেবে এই ধরনের গানের একটা শিল্পময় ও আকর্ষণীয় চেহারা দিয়েছিলেন জোহরাবাঈ, কমলা ঝরিয়া, মাস্টার মদন এবং অবশ্যই বেগম আখতার। এবং এঁদের গজল গাওয়াকে নিশ্চিতভাবে গজল গায়কির উজ্জ্বল উদাহরণ-এর স্বীকৃতি দিতে হবে।

অবিস্মরণীয়া বেগম আখতার তাঁর অনুভবদীপ্ত আন্তরিকতার গায়কি দিয়ে রচয়িতা কবিদের গজল-এ প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। আবেগতাড়িত শ্রোতাদের উদ্বেলিত হৃদয় তাঁর গান শুনে আবেগে অসহায় হয়ে পড়ত। গজল-এর জনপ্রিয়তার একটা বড় কারণ বিহ্বল হয়ে পড়া শ্রোতার গানটির কথা ও সুরবাহিত মোহিনীমায়ার সঙ্গে নিজের অস্তিত্বও মিলিয়ে নিতে চাওয়া। গজল জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রধান কারণ অসংখ্য শ্রোতা গজলটির কথা ও গায়নভঙ্গি তার নিজের আনন্দ-বেদনার অর্থবহ বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে।

বেগম আখতার অতুলনীয় গায়কিতে তাঁর শ্রোতাদের প্রতিটি মুহূর্তে প্রাণবন্ত গজল এর কবিতার প্রতি দুই লাইনের পরে কী গাওয়া হবে সেই প্রত্যাশায় অস্থির করে রাখতেন। পরের দুই লাইনে কবির বর্ণনার ছবি যেমন সম্পূর্ণ হয় এবং বক্তব্যের মূল কথাটাও প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। গজল-এর প্রথম দু’লাইন নিয়ে বেগম হৃদয়হরণ ভঙ্গির খেলা খেলতে থাকেন। শ্রোতারাও প্রত্যাশায় অস্থির হয়ে পড়েন। ঠিক সেই মুহূর্তে শিল্পী বেগম আখতার তাঁর নিখুঁত সময়জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে শ্রোতাদের সামান্যতম সময় অপেক্ষা করাবেন, হারমোনিয়ামের ওপর তাঁর আঙুলও মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে থাকবে, তার পরেই তিনি সেই মোক্ষম সময়ে, নাটকীয় ভঙ্গিতে কবিতাটির মূল বক্তব্যটি পেশ করবেন।

তাঁর নিজের সময়েই ভাষা হিসেবে উর্দুর অবক্ষয় সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি নিজেই জানতেন যে ভারতীয় উপমহাদেশের ভাগ হয়ে যাওয়ায় খুব কমসংখ্যক ভারতীয়ই উর্দুর নির্ভুল প্রয়োগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বিখ্যাত কবি মির্জা গালিব এবং অন্য সুপরিচিত কবিদের রচনায় সুরারোপ করে বা করিয়ে গাইতে থাকেন। সঙ্গীতের বিশুদ্ধতার প্রশ্নে তিনি অবশ্য সত্যিকারের গজল গায়কির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই গাওয়া চালিয়েছিলেন।

গজল-এর গায়কির প্রশ্নে বেগম আখতার -এর শূন্যস্থান শূন্যই থেকে যাবে। এমন কথাও সহজে বলে দেওয়া যায় গজল গায়িকা হিসেবে বেগম আখতার-এর গৌরবময় আসন চিরকালই ফাঁকা থেকে যাবে। এমনিতেই মহিলা সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে তিনিই বোধহয় সেই স্তরের শেষ গায়িকা, যিনি সঙ্গীত ও কবিতাকে সমপর্যায়ের গুরুত্ব আরোপ করতে পেরেছিলেন। অন্য সব সভাগায়িকা গজলগায়িকা হিসেবে সঙ্গীতকে কবিতার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। বেগম আখতার কিন্তু কবিতাকে সঙ্গীতের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এবং কাজটা একেবারেই সহজ শিল্প ছিল না।

শিল্পী হিসেবে বেগম আখতার-এর কবিতা ও সঙ্গীত — উভয়ই যেন একই সঙ্গে সহজ লাবণ্যের শরীর নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। সেই সেকালের সভাগায়িকা বা বাইজিরা ঐতিহ্যের অনুসারী হয়ে সঙ্গীত-সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে গানের প্রশ্নে নৃত্যের গুরু বা উস্তাদদের কাছে হাজির হতেন। অনেক কবি, যাঁরা খ্যাতির সন্ধানে উৎসাহী ছিলেন, যাঁরা উর্দু ভাষা-সাহিত্যের পণ্ডিত, তাঁদেরই আমন্ত্রণ জানাতেন এই সভাগায়িকারা। তাঁরা সচেতনভাবে বিশ্বাস করতেন গজল হয়ে ওঠার উপযুক্ত কবিতাগুলোর অন্তর্নিহিত আনন্দ বেদনার প্রকৃত অর্থ জানা ও বোঝার প্রয়োজন আছে। শুধু তা-ই নয়, দরবারের এবং মজলিশের সৌজন্য ও আদবকায়দা সম্পর্কেও যথাযোগ্য শিক্ষাও দরকার। খানদানি পরিবারের সঙ্গীতরসিকদের জীবনযাত্রার সঙ্গেই এই ধরনের সৌজন্যবোধ জড়িয়ে থাকে। দূরদর্শী ও যথার্থ রসিক হৃদয়-সহ বিরল যোগ্যতার শিল্পী বেগম আখতার ছিলেন এই ধরনের সভাগায়িকাদের সর্বোচ্চস্তরের প্রতিনিধি। যিনি কিনা একই সঙ্গে শিল্পী ও উঁচুমানের রুচি ও সংস্কৃতিবোধেরও উজ্জ্বল উদাহরণ।

নৃত্য ও গীতের সঙ্গে অপরিহার্য সঙ্গীতমাধ্যম হিসেবে গজল বিশ শতকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সিনেমা ও সিনেমায় ব্যবহৃত গানেরও একটা বড় ভূমিকা ছিল। সিনেমায় গান গাওয়ার দক্ষতাতেই বেগম আখতার তাঁর খ্যাতির প্রথম স্তরে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল নিতান্তই প্রাথমিক স্তর। কিন্তু পরবর্তী গৌরবময় অধ্যায় নির্মিত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া রেডিও ও গ্রামোফোন কোম্পানির রেকর্ডের মাধ্যমে। তাঁর জীবনের শুরুর দিকে রেকর্ড প্রকাশের অনেক পরে তাঁর প্রকৃত জনপ্রিয়তা এসেছিল লং প্লে ও এক্সটেনডেড-প্লে রেকর্ড-এর মাধ্যমে। গোটা দেশের বিখ্যাত সঙ্গীতব্যক্তিত্বদের বাড়িতেই পৌঁছে গিয়েছিল সেই রেকর্ডগুলো। এই ঘটনা অবশ্য প্রকৃত অর্থে অনিবার্য ছিল। কারণ ততদিনে সঙ্গীতরসিকরা তাঁর জাদু করে ফেলা কন্ঠস্বরের সঙ্গে গায়কির মধ্যে বিস্ময়কর নিয়ন্ত্রণক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, উর্দু ভাষার সঙ্গে বেগমের নিজস্ব স্বভাবজাত সম্পর্ক তাঁকে অন্য গজল গায়ক গায়িকাদের চেয়ে আলাদা করেছিল।

এখানেই উদাহরণ প্রয়োজন। অসামান্য দরদ ও উচ্চারণ দিয়ে গজল গাইবার সময় বেগম আখতার ঠিক যেভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে শব্দগুলোকে ভাঙতেন এবং জোড়া দিতেন, তাতেই উর্দু ভাষার ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য নিয়ন্ত্রণক্ষমতা প্রমাণিত হত। অথচ এই অনায়াস কর্মে কখনও সাঙ্গীতিক বিচ্যুতি ঘটত না। অন্যভাবে দেখলে, এটাও মনে রাখতে হবে এই ধরনের গায়কিতে, গায়নভঙ্গিতে যাতে কিছুতেই সঙ্গীতের আশ্রয় হিসেবে কবিতাটির সৌন্দর্যহানি না হয় সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখতেন। সহজ আনন্দে এই স্টাইলে গাইবার যে ধারা, তা বেগম আখতারের পরবর্তী সময়ের শিল্পী হিসেবে মেহেদি হাসান, ইকবাল বানু এবং ফরিদা খানুম-এর মধ্যেও কমবেশি দেখা গেছে। কিন্তু দুঃখের কথা এই, পরবর্তী সময়ের অধিকাংশ শিল্পীর মধ্যে এই বিশেষ দক্ষতা দেখা যায়নি।

১৯৪৭-এর পরবর্তী সময়ে সঙ্গীতের মাধ্যমে উর্দু ভাষার প্রচার-প্রসারে বেগম আখতার বিশেষভাবে কার্যকর এক ভূমিকা নিতে পেরেছিলেন। বিখ্যাত ও প্রতিভাবান উর্দু কবিদের রচনাকে তিনি যথাযোগ্য মর্যাদায় গেয়েছেন। এই তালিকায় আছেন— মীর,গালিব, দাখ মাকদুম, জেশ, ফৈয়াজ, শাকিল এবং অবশ্যই ক্যাইফি। এই মর্মস্পর্শী কবিদের রচনাগুলো আরও গভীর ও সুন্দরতর শরীরে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছিল যখন বেগম গজল হিসেবে সেগুলো গেয়েছিলেন। তাঁর আত্মবিশ্বাসী ও বিরল দক্ষতার সুরারোপ গানগুলোর চেহারা বদলে দিত। বিভিন্ন রাগের ব্যবহারও তাঁর গাওয়া গজলগুলোকে প্রচলিত গজল থেকে আলাদা চেহারা দিয়েছিল। তাঁর গানের জনপ্রিয়তা উর্দু ভাষার পরিচিত না থাকা, বলায় অনভ্যস্ত শ্রোতাদের কাছেও পৌঁছে দিয়েছিল। অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, বেগমের বিদায়ের পর একদা প্রবল জনপ্রিয় এই গান এখন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

গান হিসেবে গজল তার গায়কির সঙ্গে ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রাজনীতির শিকার হয়ে পড়েছে। আজকের দিনের রসিক শ্রোতাদের অভিজ্ঞতা এই সত্য তুলে ধরবে। ১৯৫০ বা ১৯৬০-এর দশকেও যেভাবে উর্দু উচ্চারণ করা হত, তাকে ধ্রুপদী বলে স্বীকার করতে কোনও অসুবিধা হত না। যাঁরা উর্দু গজলের নিয়মিত বা অভ্যস্ত শ্রোতা নন, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শব্দের উচ্চারণের বিচ্যুতি খেয়াল করবেন না। সুপরিচিত গজলের গায়কির এতটাই বিচ্যুতি ঘটেছে যে এখন আর ‘গজল’ আর ‘গীত’-এর মধ্যে পার্থক্য আরও ক্ষীণ চেহারা নিয়েছে। আশা করা যায় বেগম আখতারের এই জন্মশতবর্ষে এইসব দুঃখজনক ত্রুটি সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করবে এবং উর্দু কবিতার শ্রোতারাও গজলশিল্পী অবিস্মরণীয়া বেগম আখতারের সেই দিনগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হবে।