January 1, 2023

Exploring Raga Music on Western Instruments in India

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Debasish Mandal

Abstract: This research delves into the captivating fusion of traditional Indian Raga music with Western instruments, transcending cultural boundaries and creating a unique musical landscape. Through a comprehensive exploration of the historical context and the evolution of Raga music, this study aims to analyze the intricate adaptation and interpretation of these melodic frameworks on Western instruments within the Indian musical milieu. By examining the interplay of diverse musical traditions, the research seeks to unveil the creative processes, challenges, and artistic innovations that arise when Western instruments engage with the rich tapestry of Raga music in the Indian context. The findings contribute to a broader understanding of cross-cultural musical expressions, fostering appreciation for the dynamic synthesis of traditions that enrich the global musical mosaic.

পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রে রাগ সঙ্গীত

ড. দেবাশিস মন্ডল,  প্রফেসর, যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

কলকাতায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই। বানিজ্যিক প্রয়োজনে কলকাতা শহরের পত্তন হয়েছিল। তিনশোর বেশি বছর আগেই কলকাতা শহর দেশ বিদেশের সঙ্গে বানিজ্যিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। বহু মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে। সে সময় বানিজ্য হত মূলত জলপথে। ফলে গঙ্গা ও তার উপনদীগুলির অববাহিকা অঞ্চলে বেশি ঘর-বাড়ি গড়ে ওঠে। কলকাতাও গঙ্গার পূর্ব দিকে ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে। সে সময় কলকাতায় বসবাস করত মূলতঃ বণিক ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষেরা তাদের পরিবার। এদের শিক্ষা, চিকিত্সা, ও অন্যান্য প্রয়োজনে আরো মানুষ আসে। এভাবেই কলকাতা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ নগরে পরিণত হয়। বিত্তবান মানুষদের সুখ স্বাচ্ছন্দ ও বিনোদনের ব্যবস্থা হয়। কিছু শিল্পীও কলকাতার আশে-পাশে জড়ো হয়। মাঝে মাঝে তাদের ডাক পড়ত জমিদার ও বনিকদের বাড়িতে। কলকাতায় উচ্চাঙ্গ সংগীতের চর্চা ও অনুষ্ঠান শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে। আর ঊনবিংশ শতাব্দীতে উচ্চাঙ্গ সংগীতের বেশ সমৃদ্ধি হয়। এই শতাব্দীর শেষের দিকে কলকাতায় আসেন অযোধ্যার নির্বাসিত নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। তার সংগে একটা বড়ো সংখ্যক কবি ও সংগীত শিল্পী কলকাতায় এসেছিল।  তিনি নিজে উচ্চাঙ্গ সংগীত করতেন। কলকাতার মেটিয়াবুরুজে নিয়মিত উচ্চাঙ্গ  সংগীতের আসর বসাতেন। বহু জ্ঞানী গুনী মানুষ, রাজা জমিদার ও পাত্র-মিত্র আমন্ত্রিত হতেন তাঁর সভায়। সেখানে খেয়াল, ঠুংরী গান হত, কত্থক নাচ বা বাইজী নাচ হত। এই সময় থেকেই কলকাতা ও তার আশ-পাশের রাজা জমিদাররাও সংগীতের আসর বসাতে শুরু করে। ক্রমে তা আরো প্রসারিত হয়। অভিজাতদের বাড়িতে প্রথমে বৈঠক খানাতে, পরে বাড়ির অন্দর মহলে জায়গা পায় উচ্চাঙ্গ সংগীত। সাধারণ মানুষদের মধ্যে এই সংগীতের প্রসার ঘটে। সাধারণ মানুষেরাও উচ্চাঙ্গ সংগীত চর্চা শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত সংগীত, নৃত্য ছিল গরিব বা নিম্ন বর্ণের মানুষদের চর্চা বা পরিবেশনের বিষয়। এই সময় থেকে সংগীত ক্রমে অভিজাত ও সাধারণ মানুষের চর্চা ও শিক্ষার উপকরণ হয়ে ওঠে। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সংগীতকে সম্মানজনক  অবস্থায় পোঁছুতে অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু কলকাতা ও আশ-পাশে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই সময় থেকে। আদি কলকাতা বা উত্তর কলকাতার বিত্তবান পরিবারগুলিতে ধ্রুপদ ও খেয়াল বেশ সমাদৃত হলেও বাইজী নাচ ও গান সেভাবে সম্মান পায়নি। এর সঙ্গে জমিদারদের স্বেচ্ছাচারিতা ও পদস্খলনের অনেক সামাজিক কারণ জড়িয়ে ছিল। যাই হোক ইংরেজদের আমলেই উচ্চাঙ্গ সংগীতের সুপ্রসার ঘটে কলকাতায়।

ভারতীয় সংগীতের সূচনা হয়েছিল প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতার যুগে।  কিন্তু সেই যুগে সংগীতের রূপ কি রকম ছিল তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তার কারণ সে সময়কার সংগীত সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা বা প্রামান্য তথ্য পাওয়া যায়নি।  ভারতের সংগীত সম্পর্কে আমরা প্রথম জানতে পারি বৈদিক যুগ থেকে।  সে সময় যারা মন্ত্র তন্ত্র নিয়ে কাজ করত, তারা মন্ত্রগুলিকে সুরে ও ছন্দে উচ্চারণ করতেন। বারে বারে তা উচ্চারিত হত। ফলে সাধারণের মনের মধ্যে তা গাঁথা গয়ে যেত। তাই বেদ মন্ত্রগুলিকে কে বলা হত শ্রুতি।  পরবর্তীকালে সুরে উচ্চারিত মন্ত্রগুলি সংগীতে পরিণত হয়। যাকে আমরা বৈদিক সংগীত বা সাম গান বলে থাকি। বৈদিক সভ্যতা হাজার বছর ধরে বিস্তৃত ছিল। এ সময় ভারতের সংগীত কিরকম ছিল তা বৈদিক মন্ত্রগুলি থেকে কিছুটা ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সংগীত গবেষক বৈদিক যুগের সংগীত সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। তা থেকে জানা যায় বৈদিক সংগীত বিকশিত হয়েছিল নির্দিষ্ট নিয়ম ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এর অনুকরণের মধ্য দিয়ে। ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারনেই বৈদিক সংগীত অপরিবর্তিত থেকেছে বা বেশি পরিবর্তীত হয়নি।   কিন্তু বৈদিক যুগের প্রথমের দিকে মন্ত্রগুলি লিখে রাখা হতো না। মুখে মুখে প্রচারিত ও স্মৃতিতে ধরে রাখার কারণে তার মধ্যে নানা পরিবর্তন ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক ছিল। যাই হোক, ধর্মীয় আচার আচরণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে এই মন্ত্রগুলি পরিবেশিত হয়ে এসেছে এবং বিকশিত হয়েছে। ধর্মীয় আচার-আচরণের ক্ষেত্রে যারা মূল দায়িত্ব পালন করতেন তারা ঋত্বিক বা হোতা। তারা এই মন্ত্র গুলি উচ্চারণের নিয়ম পদ্ধতি নিরূপণ করছেন। সুনির্দিষ্ট প্রণালীর মধ্য দিয়ে এই মন্ত্রগুলি প্রবাহিত হয়ে এসেছে। বিভিন্ন যুগে এক স্বর থেকে সাত স্বরের বিকাশ হয়েছে। বৈদিক মন্ত্রগুলিও উন্নততর হয়েছে। বৈদিক মন্ত্রগুলির সঙ্গে বিভিন্ন ছন্দের ব্যবহারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  বৈদিক মন্ত্রগুলি যে সংখ্যক অক্ষর নিয়ে রচিত হত তার ওপর ভিত্তি করেই বৈদিক ছন্দের মান নির্ধারণ করা হত।  

বৈদিক মন্ত্র গুলি নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে উঠেছিল এবং নির্দিষ্ট পরিসরের বাইরেও তার প্রভাব পড়েছিল।  অভিজাত ও সাধারণের মধ্যে বৈদিক মন্ত্রগুলি যাগ-যজ্ঞ ব্যতীত গাওয়া নাহলেও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হয়তো অনুরূপ সংগীত পরিবেশিত হত। সেগুলো সব সময় সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে গীত হত না। কিন্তু সে যুগের সঙ্গীত গুনীরা এই বিপথগামী সঙ্গীতগুলিকেও প্রনালীবদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করেন।   এই সময়ের  উন্নত সংগীতগুনীদেরকে বলা হত গন্ধর্ব। গন্ধর্বরা যে সব উন্নত গান পরিবেশন করতেন তাকে বলা হত গান্ধর্ব সঙ্গীত। এঁরা একাধারে সঙ্গীত গুনী অন্যদিকে সঙ্গীত তত্ত্ববিশারদ। এঁরাই সঙ্গীতের তত্ত্ব সম্বন্ধে নানা গবেষণা করে তার তার রূপ নির্ধারণ করেছেন। ভরত মুনী তার মধ্যে একজন বিশিষ্ট্য সঙ্গীতগুনী। সেই যুগে যেসব গন্ধর্বদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি তারা হলেন তম্বরু,  অখিল, বিশ্বাবসু, দত্তিল, মতঙ্গ  প্রমূখ।  এই অভিজাত সংগীত পরবর্তীকালে আরো সুনির্দিষ্ট প্রনালীবদ্ধ রূপ গ্রহণ করে মার্গসংগীতে পরিণত হয়।  যা ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের এবং অত্যন্ত প্রণালীবদ্ধ সংগীত। উৎকৃষ্ঠ ও প্রণালীবদ্ধ বলেই এই সঙ্গীতকে বলা হতো প্রবন্ধ গান। বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ গান এই যুগে বিকশিত হয়েছিল। পরবর্তী যুগে এই গানগুলি সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলেও আরো বিস্তৃত পরিসরে তার ব্যাপ্তি ঘটেছিল। তার মধ্যে বর্তমান পাকিস্তান, আফগানিস্তান, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্যের নাম উল্লেখ করা যায়। এখনো এইসব অঞ্চলের প্রচলিত বিভিন্ন সঙ্গীতের সঙ্গে বর্তমান রাগ সঙ্গীতের যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে একথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে উত্তর ভারতের প্রচলিত অভিজাত সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারাগুলির আরো উন্নত রূপ হল রাগসঙ্গীত বা ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত।   

তখনও ভারতে প্রচলিত বর্তমান যে উচ্চাঙ্গসংগীত তার রূপ চোখে পড়েনি।  সেই যুগেই বিকশিত উন্নত সংগীতগুলি হল প্রবন্ধ গান। প্রবন্ধ গান হল প্রকৃষ্ট রূপে নিবন্ধ এক ধরনের সংগীত যা কোন নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে গাওয়া হতো। বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ গান ছিল। তার পরিধিও বিস্তৃতি ছিল ভিন্ন ধরনের। দীর্ঘদিন ধরে প্রবন্ধ গান ভারতের প্রায় সর্বত্রই পরিচিতি লাভ করেছিল ও বিস্তৃতি লাভ করেছিল।  মুসলিম শাসনের যুগে আরব এবং পারস্যদেশ থেকে যে সব মানুষেরা ভারতে এসেছিল তাদের সংগীত ও সংস্কৃতির সঙ্গে  ভারতীয় সংগীতের সংমিশ্রণ ঘটে।  ভারতীয় প্রবন্ধ গানগুলিরও পরিবর্তন ঘটে।  কেউ কেউ বলে থাকেন প্রবন্ধ গানের সঙ্গে পারস্য সঙ্গীতের সংমিশ্রনের ফলে ভিন্ন ধরনের সংগীত বিকশিত হয়। অনেকে মনে করে থাকেন কৈবাট প্রবন্ধ থেকে খেয়াল এবং ধ্রুব প্রবন্ধ থেকে ধ্রুপদ গানের সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও এ সম্পর্কে যুক্তিগ্রাহ্য ভিন্ন মত রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ গান এই যুগে বিকশিত হয়েছিল। পরবর্তী যুগে এই গানগুলি সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে ও আরো বিস্তৃত পরিসরে ব্যপ্ত হয়েছিল। তার মধ্যে বর্তমান পাকিস্তান, আফগানিস্তান, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্যের নাম উল্লেখ করা যায়। এখনো এইসব অঞ্চলের প্রচলিত বিভিন্ন সঙ্গীতের সঙ্গে বর্তমান রাগ সঙ্গীতের যথেষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে একথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে উত্তর ভারতের প্রচলিত অভিজাত সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারাগুলির আরো উন্নত রূপ হল রাগসঙ্গীত বা ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত।   

অনেকে মনে করেন  মুসলিম আমলে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বিকাশ হয়েছিল। যারা উচ্চাঙ্গ সংগীত বিকশিত হতে সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে আমির খসরু ছিলেন অন্যতম বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।  সে সময় আলাউদ্দিন খিলজী ভারতে রাজত্ব করতেন। আরো পরে মুঘল রাজাদের সময় ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত আরো সমাদর লাভ করে। মূলত নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সংগীত বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। যখন আকবর তার দরবারে সঙ্গীত গুনীদেরকে জায়গা করে দিয়েছিলেন এবং তিনি নিজে সঙ্গীতের একজন সমঝদার ব্যক্তিত্ব ছিলেন। অন্যান্য কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত সংগীতের আসর বসাতেন এবং সংগীত গুণীদের কে যথাযথ পারিশ্রমিক বা উপঢৌকন দেওয়ার মধ্যে সম্রাট আকবরের সাংগীতিক বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সময়ে তার সভা সভা গায়ক হিসেবে ছিলেন মিয়া তানসেন। তাঁর সম্পর্কে আমরা অনেক কাহিনী মুখে মুখে শুনতে পাযই। তার মধ্যে যথার্থতা যতখানি থাকুক না কেন, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে নবাব আকবরের দরবারে যে স্থান করে নিয়েছিলেন এবং সম্রাট আকবর তানসেন কে যেভাবে মূল্যায়ণ করেছিলেন তা সত্যিই অতুলনীয়। তার সূত্র ধরে সে সময় সেখানকার পাশাপাশি অঞ্চলে সংগীত শিক্ষা এবং সংগীত শ্রবনের প্রতি গুরুত্ব অনেকখানি বেড়ে যায়।  দেখা দেখি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় জমিদারেরা উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। এভাবেই ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত দিল্লি থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে  পড়ে।  দিকে দিকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত নিয়ে নানা গবেষণা (চর্চা) শুরু হয় এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত কে আরো জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে বহু মানুষ তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এক দিক দিয়ে যেমন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত হিসাবে ধ্রুপদ খেয়াল বিকাশিত হয়েছে। ভারতীয় নৃত্য শৈলীর প্রসার ঘটেছে এই সব উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নৃত্য এবং অন্যান্য ভারতীয় বিভিন্ন চারুকলা শুধুমাত্র আরব থেকে আসেনি এগুলি ভারতের সনাতন শিল্প-সংস্কৃতির ধারক-বাহকও বটে। শিল্প সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে নতুন নতুন সঙ্গীত ধারা গড়ে ওঠে এবং তা বিকশিত হতে থাকে। দিল্লির পাশাপাশি বেনারস ও সংলগ্ন অঞ্চলে উচ্চাঙ্গসংগীত জনপ্রিয়তা গভীর হয়। বহু মানুষ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং তার সত্যতা হিসাবে গড়ে ওঠে পাশাপাশি সংগীতের সঙ্গে উচ্চাঙ্গ নৃত্য এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি কত্থক নৃত্য। ১৮৫৭ সালে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে স্থানান্তরিত হয়ে পড়লে তার সঙ্গে লোকজনও কলকাতায় আসে। সংগীত নৃত্য শিল্পী বাদ্য বাদ্যযন্ত্র নির্মাতারাও তার সঙ্গে কলকাতায় আসে। এইসব ঘটনা চক্রে কলকাতা সে দিক থেকে কতকগুলি সাঙ্গীতিক উপকরণ পেয়ে যায়। ক্রমে ক্রমে মেটিয়াবুরুজে এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলের সঙ্গীত চর্চা বাড়তে থাকে। কলকাতায়ও তার নানা প্রভাব পড়ে। কলকাতার রাজা জমিদার এবং বিশিষ্ট মানুষেরা উচ্চাঙ্গ সংগীতের স্বাদ পেতে থাকে। তারাও তাদের নিজস্ব পরিসরে নিজেদের জায়গায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত চর্চা  উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আয়োজন করতে থাকে।  এভাবেই উচ্চাঙ্গ সংগীত কলকাতায় একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ে। 

এই সময় ও এর আগে কলকাতায় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মূলত বাংলার গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির ধারা প্রবাহিত হয়ে চলেছিল।  সেই ধারার সঙ্গে যখন বাদশাহী নতুন ধারা এসে হাজির হয়। কলকাতার মানুষ তাকে সাদরে গ্রহণ না করলেও ক্রমে গুণী মানুষেরা তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং তারাও সেই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত চর্চার মধ্যে নিজেদের কে নিযুক্ত করেন। ইতিমধ্যে ইংরেজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে,  কলকাতায় ইংরেজরা তাদের শাসন পরিচালনার জন্য কলকাতাকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলেছে। তার সূত্র ধরেই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগমন ঘটেছে কলকাতায।

ওলন্দাজ, ইংরেজ ও পোর্তুগিজ বনিক, মিশনারী ও প্রশাসকদের ছেলেমেয়েদের লেখা-পড়া ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার জন্য কলকাতায় অনেক স্কুল চালু হয়। যা বাঙালিদেরও অনুপ্রাণিত করে। কলকাতায় বাঙালিদের জন্যও স্কুল চালু হয় দেশীয় অগ্রণী মানুষদের প্রচেষ্টায়। সংগীত শিক্ষারও ব্যবস্থা হয়। সংগীতের স্কুল গড়ে ওঠে। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের সংগীত শেখানোর জন্য অভিজাতরা এগিয়ে আসেন। নিজেদের বাড়িতে গৃহ শিক্ষক রেখে উচ্চাঙ্গ সংগীত শেখানোর বন্দোবস্ত হয়। কলকাতায় ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মানের সঙ্গে গাওয়ার রীতি চালু হয় ইংরেজ আমলে। বাংলার নব জাগরণ ভারতীয়দের সেভাবেই এগিয়ে দেয়। পাশ্চাত্য ভাবনা বাঙালি ও ভারতীয়দের ক্রমে আধুনিক করে তোলে। যা কলকাতায় উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রসারে বিশেষ সহায়তা করেছে।

কলকাতায় বেতার তরংগের সম্প্রসারণের ফলে উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। উচ্চাঙ্গ সংগীতের স্বাদ অনুভব করে সাধারণ মানুষ। গ্রামোফোন রেকর্ড উচ্চাঙ্গ  সংগীতের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতীয়দের একপ্রান্তের মানুষের পরিবেশনা উপভোগ করেছে অন্য প্রান্তের মানুষও। গ্রামোফোন থেকে রেকর্ড প্লেয়ার বাজিয়ে একই রচনা বহুবার ধরে শুনেছে উপভোগ করেছে শত সহস্র মানুষ। উচ্চাঙ্গ সংগীত শিক্ষার ক্ষেত্রে এই গ্রামোফোন থেকে শুরু হয়েছে নতুন অভিযান। কলকাতার সঙ্গে ভারতের সকল প্রান্তের সাংগীতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এই সময় থেকে। ভারতের বাইরেও গেছে ভারতীয় সংগীতের রেকর্ড। অভারতীয়রা কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে উপভোগ করেছে ভারতের উচ্চাঙ্গ সংগীতের সুরধ্বনি। কলকাতার অনেক সংগীতগুনী আমন্ত্রিত হয়ে সংগীত পরিবেশন করেছেন বিদেশে।  বিদেশ থেকে অনেকে সংগীতের টানে কলকাতায় এসেছেন। এভাবেই কলকাতার সঙ্গে বহির্বিশ্বের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে।

দ্বারকানাথ, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ অনেকেই ইংলণ্ডে গিয়েছিলেন। সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার আধুনিকতাকে এঁরা গ্রহণ করেছেন। ভারতীয়দেরও আধুনিক করে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। প্রথমে নিজেদের বাড়িতে আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য বিদেশ থেকে সে-দেশের বাদ্যযন্ত্র এনেছেন। শিখিয়েছেন নিজের ছেলে-মেয়েদের। বিদেশের সংগীতের সঙ্গে এভাবেই সম্পর্ক স্থাপন শুরু হয়েছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। দেশি ও বিদেশি গানের চর্চা পাশাপাশি চলেছিল। দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠ সন্তান দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদার মনের মানুষ ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির প্রতিটি সদস্যকে শিক্ষা সাংস্কৃতিক চেতনায় আধুনিক করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টার অন্ত ছিলনা। বাড়িতে সব ধরণের শিক্ষার ব্যবস্থাই ছিল। গান বাজনা শেখানোর শিক্ষকও ছিল একাধিক। পাশ্চাত্য সঙ্গীত শেখানোর জন্য ইংরেজ শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল। বিষ্ণু, শ্রীকণ্ঠ সিংহ, যদুভট্ট শেখাতেন ভারতীয় সংগীত। ভারতীয় সঙ্গীতে পাশ্চাত্য প্রভাব পড়েছিল অষ্টাদশ শতকে ও পরবর্তীকালে। ঠাকুরবাড়িতে পিয়ানো বাজাতে পারতেন দেবেন্দ্রনাথ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ খুব ভালো পিয়ানো বাজাতেন। কত সুর তিনি রচনা করতেন পিয়ানোতে। কলকাতার পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাজানো সম্ভবত হারমোনিয়ামেই শুরু হয়। যদিও ডায়াটনিক স্কেল। কাটা কাটা আওয়াজ। তবুও রাগের স্বরূপকে ধরতে বেশি অসুবিধা হয়নি। সন্তুর ভারতীয় বাদ্য হলেও পাশ্চাত্য বাদ্যের অনুসরণে তৈরি। কতকটা পিয়ানোর মত। তাতেও যে সুর রচিত হয় তা ঠিক শ্রুতির বিচারে মেলে না।

বিদেশের সংগে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পায় স্বাধীনতার পরে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারতীয় সংগীত শিল্পীরা আমন্ত্রিত হতে থাকেন। অ-ভারতীয়দের মধ্যে ভারতীয় সংগীতের প্রতি প্রীতি বাড়তে থাকে। স্বাধীনতার পরে কলকাতায় ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বহু সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বিদেশে সংগীত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আলি আকবর খান। তিনি সুইজারল্যাণ্ডে, ইংলণ্ডে, আমেরিকায় ‘আলি আকবর কলেজ অব মিউজিক’ গড়ে তোলেন। সেখানে বহু বিদেশী ভারতীয় সংগীত চর্চার সুযোগ পান। আলি আকবর নিজে ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা সেসব কলেজে সংগীত শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ভারতীয়দের পাশাপাশি অভারতীয়রাও ভারতীয় সংগীতকে নিয়ে নানা গবেষণা শুরু করেন। ভারতীয় সংগীত ক্রমে আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কলকাতার সঙ্গে ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশের সংগে সাংগীতিক সম্পর্ক নিবিড় হয়। কলকাতায় বাদ্য যন্ত্রের কারিগরদের দক্ষতা সম্বন্ধে পৃথিবী জুড়েই সুনাম রয়েছে। ফলে বিদেশীরা বাদ্য যন্ত্র কেনা বা তৈরি করানোর জন্য কলকাতায় আসতে থাকেন বা অর্ডার দিতে থাকেন। এভাবেও কলকাতার সংগে অ ভারতীয় শিল্পীদের সম্পর্ক বাড়তে থাকে।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল কলকাতায় সারা দেশের ও সারা পৃথিবীর সব দেশের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করেন। প্রতিদিন দেশ বিদেশের বহু মানুষের আনাগোনার শহর কলকাতা। তাই কলকাতাকে অনেকে ‘ছোট্ট পৃথিবী’ বলে থাকেন। এছাড়া ভারতীয়রা কলকাতাকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী মনে করেন। বিশেষ করে সংগীত শিল্পীরা কলকাতায় অনুষ্ঠান করে যে সমাদর পান ভারতের আর কোথাও এই সমাদর পান না। ফলে সমস্ত গুনী শিল্পীরা কলকাতায় অনুষ্ঠান করার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করেন। বিদেশীরাও কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশ্বায়নের পরে কলকাতার সঙ্গে দেশ বিদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হয়। 

কলকাতার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত নিয়েও পরীক্ষা গবেষণা চলেছে বহু কাল ধরে। বেহালা যেভাবেই আসুক তার সুর ভারতীয় রাগ রচনায় অনবদ্য একথা সবাই মানবেন। উস্তাদ আলী আকবর খান বিদেশে ‘আলী আকবর কলেজ অফ মিউজিক’ চালু করেছিলেন বিংশ শতকে। এরপর বিদেশে ভারতীয় সঙ্গীত এর চাহিদা বাড়ে। বড়, মাঝারি মাপের বহু শিল্পী কলকাতা থেকে ডাক পান আমেরিকায়, ইউরোপে। আলোচনা অনুষ্ঠান বাড়তে থাকে। বিদেশ থেকেও কলকাতায় আসেন বহু মানুষ এখানে থেকে বিভিন্ন গুনী শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হতে, আর শিখতে। তারাও সেতার, সরোদ বেহালায় ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে বুঝতে ও বাজাতে শেখে। ভারতীয় সুর শিখে বুঝে নিজেদের যন্ত্রে ভারতীয় সুর বাজানোর চেষ্টা করে, সফলও হয়। যদি অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সম্পূর্ণরূপ একেবারে ঠিক ভাবে প্রকাশিত হয় না, তথাপি তা নতুনতর আবেশ সৃষ্টি করে। তাদের বাদন পদ্ধতি ভারতীয় সুরকে সমৃদ্ধ করেছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বহু বিদেশী শিল্পী কলকাতায় ভারতীয় পোশাক পরে নিজেদের বাদ্য যন্ত্রে বিভিন্ন রাগের সফল অনুষ্ঠান করছেন। এর মধ্যে কলকাতায় বেশ নাম করেছেন অল্টো স্যাক্সোফোনে অ্যানড্রিউ কে, সুপ্রানো স্যাক্সোফোনে জোনাথন কে। জেসে ব্যানিষ্টারও সম্প্রতি কলকাতায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে স্যাক্সোফোনএ ভারতীয় রাগ সংগীত পরিবেশন করেছেন। এরা ভারতীয় রাগ সংগীত পরিবেশন করছেন কলকাতার উত্তরে-দক্ষিনে, পূবে সর্বত্র। কলকাতা থেকেই ব্যাপ্তি ঘটছে ভারতীয় সংগীতের। এইসব শিল্পীরা কলকাতায় আসছেন। বহু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। আবার কলকাতায় বহু গুরুর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেছেন কেউ কেউ। বিশ্বায়ণের এর পর গণমাধ্যম বিশেষ করে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে যোগাযোগ বেড়েছে। আমেরিকা, ইউরোপে বসে কলকাতার সঙ্গীত গুরুর কাছে তালিম নিচ্ছে বহু শিক্ষার্থী। কলকাতায় ভারতীয় সংগীত শিখতে আসছে অভারতীয় বিদেশীরা অনেকেই। জাপান, ফিলিপাইন্স, আমেরিকা, ইউরোপ থেকে প্রতি বছরই ছাত্র আসছে। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের সঙ্গে মিশছে, বিদেশী সুর। হয়তো সমৃদ্ধ হচ্ছে। তবে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর্ব শুরু হয়েছে বিশ্বায়ণের যুগে। এর সুফল নিশ্চয় মিলবে।

বিশ্বায়ণের পরে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভারতীয় সংগীত চর্চা কী রকম চলছে সে সম্বন্ধে জানা যাচ্ছে। কারা কোথায় ভারতীয় সংগীত পরিবেশন করছে বা চর্চা হচ্ছে কীভাবে এসব জানা যাচ্ছে খুব সহজে। তা থেকে দেখা যাচ্ছে বহু ফরাসী, ইংরেজ, আমেরিকান সেতার সরোদ ও অন্যান্য বাদ্য যন্ত্রের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। international list of teachers on classical Indian music এর ওয়েব সাইটে বহু ভারতীয় শিল্পীর নাম দেখা যাচ্ছে। যারা নিয়মিত বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করেন। এর মধ্যে ফ্রান্সে নিকোলাস ডিলাইক (Nicolas Delaigue ), আয়ারল্যাণ্ডে ম্যাথু ন্যুন (Matthew Noone), ইটালির ফ্যাবিরজিও ব্রুয়া (Fabrizio Brua), ফ্রাজ আলি (Fraaz Ali), রিকার্ডো বাটাগিলা ( Riccardo Battaglia), নেদারল্যাণ্ডের শ্রুথি আপ্পু (Sruthy Appu), লণ্ডনের এরমিস সাভন্তোগ্লৌ (Ermis Savvantoglou), বুধাপেস্ট এর টোথ জাবি (Toth Szabi) প্রমুখ। পৃথিবীর সব দেশেই ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের কদর ক্রমশ দিনদিন বেড়েই চলেছে।  শ্রোতার সংখ্যাও বাড়ছে। কলকাতায়ও অনেক অভারতীয় নিয়মিত আসছে। ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রে অভারতীয়দের হাতে বাজছে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত। আবার বিদেশীরা অনেকেই তাদের দেশীয় বাদ্যযন্ত্রেও বাজাচ্ছে ভারতীয় সুর ঝঙ্কার। কলকাতায় আসছে বিদেশীরা। কলকাতা শ্রোতারা সব ধরণের গুনীদের সমাদর জানে। তাই বিদেশীরাও চান নিজেদের শৈল্পিক দক্ষতার মান যাচাই করে নিতে। তারা কলকাতায় অনুষ্ঠান করার জন্য যথেষ্ট উদগ্রীব থাকে। বিশ্বায়নের ফলে বিদেশের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পরষ্পরের সম্পর্ক নিবিড় হয়। ভারত ও কলকাতার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বাড়ে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর সব দেশের মধ্যেকার সব খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশের শিল্পীদের সঙ্গে ভারতীয়রা পরিচিত হয়। নানাভাবে কলকাতায় উচ্চাঙ্গ সংগীতের নতুন নতুন দিক উন্মেষিত হচ্ছে।