November 1, 2022

অপৌরুষেয় উপন্যাসের আলোয় ‘অপর’ এর অনুসন্ধান

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

ধৃতি সিন্‌হা

প্রবন্ধসার

ভারতীয় সংবিধানের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম বেঁচে থাকার অধিকার। লিঙ্গ-জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে। কিন্তু সমাজ নামক সংগঠন লিঙ্গ-জাতি-ধর্ম-বর্ণের বৈচিত্র্যকেই ব্যবহার করে এই সমানাধিকারের দাবীকে চায় নস্যাৎ করতে। সবদেশেই প্রথমত  লিঙ্গ পরিচয় দিয়েই নির্ধারিত হয় মানুষের সামাজিক অবস্থান। স্ত্রী – পুরুষ এই জেন্ডার বাইনারিকেই সমাজ স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। বিসমকামিতাই সমাজ অনুমোদিত। এর পাশাপাশি বিকল্প যৌনতা বা  জেন্ডার নন-বাইনারির মতো ধারনাগুলো কিন্তু নতুন নয়। যেমন নতুন নয় তৃতীয় লিঙ্গ ও তার সমাজ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টা। সমাজের  এই ‘অপর’ অর্থাৎ LGBTQ গোষ্ঠী  তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজের মতো সাহিত্যে কিন্তু তারা ব্রাত্য নন। দেশ-বিদেশের সাহিত্যে তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। ভারতীয় সাহিত্যে মহাকাব্য থেকে শুরু করে উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্পেও তাদের অনুভূতি ভাষা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন ঔপন্যাসিকের কলমে প্রকাশ পেয়েছে সমাজের প্রান্তবাসী মানুষদের আনন্দ-বেদনা-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ক্ষেত্রগুলো। শ্রী নলিনী বেরার উপন্যাসেও অন্ত্যজ-লোকায়ত জীবন ছায়া ফেলে গেছে বারে বারে। লিঙ্গ পরিচিতির বৈচিত্র্যকেও তিনি বেছে নিয়েছেন লেখার বিষয় হিসাবে। সমাজ অন্ত্যজ হোক বা  অভিজাত – একুশ শতকেও তৃতীয় লিঙ্গ বিদ্রূপের পাত্র। নলিনী বেরা  রচিত ‘অপৌরুষেয়’ উপন্যাসের ‘না পুরুষ না নারী’ আনন্দী তেমনি বিদ্রূপের পাত্র। আলোচ্য প্রবন্ধে হিজড়ে আনন্দীর  মধ্যে দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের সামাজিক অবস্থান (মূলত অন্ত্যজ সমাজ প্রেক্ষিতে) চিহ্নিত করার পাশাপাশি তার মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

অপৌরুষেয় উপন্যাসের আলোয়অপরএর অনুসন্ধান

নর এবং নারী – সমাজের এই  জেন্ডার বাইনারির সীমার বাইরে যারা রয়ে গেছেন, ‘অপর’ তারা। এল জি বি টি কিউ শব্দটির  সাথে কম- বেশি পরিচিত আজ প্রায় সকলেই। কিন্তু এই পরিচয় শুধুই শব্দকেন্দ্রিক নয়তো ! নাহলে আজও কেন রূপান্তরকামী কিশোরকে যেতে হয় মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে, সমকামিতা আইনি সুরক্ষা পেলেও কেন তা নিয়ে কানাঘুষোর শেষ নেই ? পরীক্ষা বা কাজের জায়গায় আসন সংরক্ষণ করলেও তৃতীয় লিঙ্গের (Third Gender) এই অন্তর্ভুক্তিকে যেন মেনে নেওয়া  যাচ্ছেনা স্বাভাবিক ভাবে। স্যাফো থেকে শুরু করে নাজ ফাউন্ডেশন পরে নালসা রায়  – তৃতীয় লিঙ্গের  স্বীকৃতি ও অধিকার সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছে। দাবি দাওয়া -আন্দোলন অধিকার চলছে চলবে।সাহিত্যেও তারা ব্রাত্য নয়। সমকামিতা, বিকল্প যৌনতা, রূপান্তরকামিতার পাশাপাশি লেখক তুলে ধরছেন হিজড়ার অনুভূতি, তার মনস্তত্ত্ব। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন ‘হিজড়া’ শব্দের সাথে  জন্মগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গচিহ্ন যুক্ত বা উভলিঙ্গের (Hermaphrodite)  ধারণাকে এক করে দেখা হলেও পুরো সত্যিটা অন্যরকম। রূপান্তরকামী পুরুষের দেখাও যেমন হিজড়া গোষ্ঠীতে মেলে তেমনি নিছক রোজগারের মাধ্যম হিসাবেও অনেকে বেছে নেয়  এই পথ। আকুয়া, ছিবড়ি, নিহারণ, ভবরাশি—এই নামের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে তাদের আসল পরিচয়। গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে রুজিরোজগারের জন্য তারা বেছে নেয় বাঁধাই খাটা, ছল্লা বা মাঙ্গতি, লগন(নাচ), খাজরার পথ। মধ্যযুগ হোক বা বৃটিশ শাষিত ভারত, অপমান, অত্যাচার, বঞ্চনা, যন্ত্রনার ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে হিজড়া সমাজ। আজ হয়তো তাদের স্বার্থে গঠিত হচ্ছে বিভিন্ন বোর্ড, সংরক্ষণের আওতায় আসছে তারাও, কখনোবা নির্বাচিত হচ্ছেন বিধানসভার সদস্য হিসাবেও। কিন্তু তাদের নিয়ে যে ট্যাবু  আগে ছিল আজও তা রয়ে গেছে একভাবে। এই ট্যাবু ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচ্য প্রবন্ধ লেখা হয়নি। বর্তমান প্রবন্ধ সচেতন পাঠকে র সামনে তুলে ধরতে চায় সেই ‘অপর’এর কথা  যারা ‘না পুরুষ না স্ত্রী’, বিশ্লেষণ করে দেখতে চায় সমাজের প্রান্তে পড়ে থাকা এক হিজড়ের মনের বিবিধ স্তর। হয়তো সেক্স-জেন্ডারের বড় পরীক্ষায় সে ফেল করে গেছে বলেই তাকে আর মানুষ বলা গেলনা ! শ্রী নলিনী বেরার অপৌরুষেয়  উপন্যাসের ‘আনন্দী’ কে কেন্দ্রে রেখে প্রবন্ধের আলোচনা এগিয়েছে ।

Originally intended to dispute the biology-is-destiny formulation, the distinction between sex and gender serves the argumentthat whatever biological interactability sex appears to have, gender is culturally constructed: hence, gender is neither the causal result of sex nor as seemingly fixed as sex.  

জুডিথ বাটলার (Judith Butler) এর সেক্স ও জেন্ডারের ধারণাকে পাথেয় করে চিনে নেওয়া যাক ‘অপর’ আনন্দীর সামাজিক অবস্থান। সুবর্ণরেখার তীরের কুমোরপাড়ার আনন্দী – না-নারী না-পুরুষ , আনন্দী ‘হিজড়ে’। তার লিঙ্গপরিচিতি উপন্যাসের শুরুতেই পাঠকের জানা হয়ে যায়। কুমোরপাড়ায় থাকে আনন্দী তবু কুঁদা গড়তে পারেনা – বলায় একটু ভুল হল বোধহয় ! হিঁজড়ে বলে কেউ তাকে ‘চাক-চকটবাড়ি’ ছুঁতে দেয়না , গড়তে দেয়না কলসী। দিলে হয়তো সেও সেরা কুমোরের সম্মান পেত। কিন্তু আনন্দী ‘হয়তো’র  র গণ্ডী পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছে। মুরগির ব্যবসা তার। গোলবাজার তার কাছে সব পেয়েছির দেশ। কাজের সাথে সাথে বিনোদনের দিকেও তার খেয়াল যথেষ্ঠ ! সুখে – দুঃখে পরিবারেরই একজন সে। তবু কোথাও যেন আত্মীয়তার অভাব বোধ করে সে ! আবার পরিবারের স্বার্থেই খদ্দের মহাজনদের তুষ্ট করার আশ্চর্য ক্ষমতাও তার আছে। দাদা ভৈরবের সঙ্গে লাউদহর সদানন্দ পালুইয়ের ঝামেলা মিটিয়ে ‘এট্টি – টন্টি ‘র ভাগাভাগিতে মহাজনকে রাজি করানোর কৌশল সে রপ্ত করেছে । তবু যেন ভরসা করা যায়না , সন্দেহ হয় “ না-নারী না-পুরুষ আন্দী আর কতটুকু কী করবে , তবু দেখা যাক ! “ 

পরিপূর্ণ মানুষ আনন্দী। অভাববোধের জায়গাকে সে ভরিয়ে রাখতে চায় ঠুনকো- সস্তা জিনিস দিয়ে –  হাতে তার ‘অ্যাংলোসুইচ’ ঘড়ি, ‘ফুলশাট’, তাপ্পি মারা সুয়েটার ,কী নেই তার ! শহুরে গালমন্দও  (বিকৃত উচ্চারণে) তার মনের ক্ষোভপ্রকাশে সহায়ক। নিজের জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছে সে – গোলবাজারে সিনেমা-বায়োস্কোপ দেখে সে এগিয়েছে ‘এলে গেলে মহল্লার’ দিকে । প্রেম আসে তার জীবনেও – ফুপু , দেহোপজীবিনী ফুপু । যার সঙ্গ পেতে , সান্ত্বনা পেতে ‘পিকচারে’ দেখা দেবদাসের ট্র্যাজেডি মূহুর্তে আনন্দীর করুণ প্রেম কাহিনীতে বদলে গেছে। প্রসঙ্গত মনে পড়ে যায় সখীসেনার কথা (কবিতা সিংহের পৌরুষ  উপন্যাস)। হিজড়ে দল থেকে পালিয়ে এসে সে বাঁচতে চেয়েছে তার ভালোবাসার মানুষ লক্ষ্মণের সাথে। আখের রসের কল কিনে স্বনির্ভর হতে চেয়েছে। শেষপর্যন্ত কিন্তু ঠকে গেছে সে ! সুমতির গর্ভে লক্ষ্মণের সন্তান – সখীসেনা ফিরে গেছে গুরুমায়ের খোলে।আনন্দীর পরিস্থিতি আলাদা ! তবু শেষ রক্ষা হয়নি। অসম্পূর্ণতা আর একাকীত্বের যন্ত্রনায় আনন্দী সমীকৃত হয়েগেছে সখীসেনার সাথে। আনন্দীর পরিচয় ফুপুর হাসির খোরাক জুগিয়েছে –

“ … শেষপর্যন্ত এক পুরুষত্বহীন নপুংসকের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকল আনন্দী ! … ফুপু হাসতে হাসতে হাত চাপা দিল মুখে , আর আনন্দী – আনন্দী ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল । “  

আনন্দী হেরে গেছে  ফুপুর কাছে , তামাশার পাত্র হয়েছে গ্রামবাসীদের কাছে। সে হিজড়ে , অপয়া , নপুংসক – তার ভালো তাসগুলো  নিয়ে খেলা যায়, সাফল করতেও আরাম  কিন্তু তাকে খেলায় নিলে হার নিশ্চিত । সত্যযুগের শিখন্ডির  গুরুত্ব মহাভারতকার স্বীকার করে নিলেও কলিকালের অপয়া হিজড়ে আন্দীরাঁড়িকে একটাও সুযোগ দিতে নারাজ সুধাংশু ,আশুতোষেরা। মহিলামহলেও আনন্দীকে চলে ঠাট্টা তামাশা – ‘ মেয়েরা মোটেও গ্রাহ্য করেনা আনন্দীকে। কী আছে আনন্দীর যে  তারা তাকে মান্য করবে ? ‘  এই মান্য না করার কারণ ‘Gender’ শব্দের তাৎপর্যেই স্বতোপ্রকাশিত –

Gender ought not to be conceived merely as the cultural inscription of meaning on a pregiven sex ( a juridical conception); gender must also designate the very apparatus of production whereby the sexes themselves are established. As a result, dgender is not to culture as sex is to nature; gender is also discursive/cultural means by “sexed nature” or “a natural sex” is produced and established as “prediscursive”, prior to culture, a politically neutral surface on which culture acts.  

তবু আনন্দীর মনের একমাত্র ইচ্ছে  – একবারের জন্য সে টুসুর মা হবে ! ‘একটা ঠুনকো মামুলি মেয়েলি ব্যাপার’ – কিন্তু মামুলি ব্যাপারেও পার পায়না সে। মা সাজার  ইচ্ছেকে বিদ্রূপ করেই তারা  ক্ষান্ত হয়না বরং চরম নিষ্ঠুরতায় যেন নড়িয়ে দেয় আনন্দীর মনের শক্ত ভিত  –

“ বাউড়ির রাতটা বড় , আনন্দীর ইচ্ছাটাও বড় ছিল। মা হতে চেয়েছিল আনন্দী , হতে পারলনা । এতদিন ধরে গোপনে সলতে পাকানোর মতো  ধীরে ধীরে পাকিয়ে তোলা তার ইচ্ছাটা কেঁচে গেল। কেটে গেল , দু-টুকরো হল। … চুড়ি ভাঙছে আর মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটোয় কপাল ঠুকে আনন্দী বলছে- দয়াল হরি ! পরের জন্মে মা করো নয়তো বাপ করো হে – “ 

একই কাতর আর্তি শোনা গেছে কমল চক্রবর্তীর ব্রহ্মভার্গব পুরাণ এ কাঁদোল পরবে আসা হিজড়াদের গানে –

জগন্নাথ হে আর জন্মে

ছ্যাইলা কর হে

জগন্নাথ হে আর জন্মে

 মাইয়া কর হে … ।  

চিকিৎসা বিজ্ঞানের  পরিভাষায়  আনন্দীকে হার্মাফ্রোডাইট বলা যাবে কিনা তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত উপন্যাসে নেই কারণ লেখক আনন্দীর শারীরিক গঠনের ত্রুটিকে বড় করে দেখাননি। ঔপন্যাসিকের বর্ণ্নায় আনন্দী সম্পর্কে পাঠকের একটা সামগ্রিক ধারণা তৈরি হয় – তার মধ্যে না আছে ‘নারীর বুকের উন্নতি , ঢেউ ‘ না আছে ‘পুরুষের দেহের উন্নতি’ এমনকি ‘দৃঢ়তাও তার নিম্নাঙ্গে নেই। শুধুই সমতল সমতল।এতটুকু আঁকঢাঁক নেই।‘ ( বেরা, পৃষ্ঠা- ১০) আনন্দীর ক্রোমোজম সংখ্যার গড়মিলের তাত্ত্বিক ব্যাখা আলোচ্য উপন্যাসে নেই। বরং আনন্দীর বাৎসল্য- প্রেম- আবেগ- আকাঙ্ক্ষার কথা লেখকের কলমে বার বার উঠে এসেছে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন –

“যে নদীতে ঢেউ নেই, আছে কেবল টুরিব্যাঙ আর জলঘুন্নি পোকার নিরন্তর ‘বুড়বুড়ি’ , ঊরাল-ঘূর্ণি নেই , আছে নিস্তরঙ্গ নিস্তেজ নিস্পৃহ জলধারা – সে-নদী কী নদী নয় ? “

 এই ‘নিস্তেজ নিস্পৃহ জলধারার’ পরিচয় মেলে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর হলদে গোলাপ উপন্যাসেও। সমকামিতা বা প্রান্তিক যৌনতার মতো বিষয় নিয়ে লেখা এই উপন্যাসে দুলাল ওরফে দুলালী, পরিমল ওরফে পরি, মন্টুদের মানসিক টানাপোড়েন, বিশৃঙ্খল জীবনযাত্রা, অস্তিত্বরক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গসত্তাকে নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন মিথ, অপব্যাখার অন্ধকার দূর করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তত্ত্বকেও পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। হার্মাফ্রোডাইটিজম, সিউডোহার্মাফ্রোডাইটিজম, টার্নার সিনড্রোম, ক্লাইনেফেলটার সিনড্রোম – লিঙ্গচিহ্ন ত্রুটির বিভিন্ন পরিভাষার সঙ্গে পরিচয়ের সাথে সাথেই জানা হয়ে যায় সেই সত্যি যা মেনে নিতে আমাদের আজও সঙ্কোচ হয় –

“ … এগুলো তো সব ক্রোমোজোমের ভাগাভাগির গোলমাল। জেনেটিক খুঁতও বলা যায়। পরিপূর্ণ স্ত্রী-জননাঙ্গ বা পুরুষ- জননাঙ্গ তৈরি হতে পারল না যে- কারণে। বাইরের জননাঙ্গের বিকাশ না-হলেও তো ওদের মধ্যে প্রেম থাকে, ভালোবাসা থাকে, দুঃখবোধ থাকে, ছন্দ-প্রভাবে নাচ জাগে, চাঁদের আলো সমুদ্রের ঢেউ ভাল লাগে, একসঙ্গে সবার সাথে ফুচকা খেতেও ইচ্ছে হয়। জিন ওখানে কিছু করতে পারেনা।…”

            পরিবারে ব্রাত্য নয় আনন্দী। স্নেহে-মমতায়-খুনসুটিতে সে ভরিয়ে রাখে রতিকান্ত, বড়বুড়ি সুস্মিতার মন।দাদার সংসারে  ভালোয় – মন্দয় মিলে মিশে কেটে যায় তার দিন। কুমারী সুস্মিতার গর্ভধারণের খবরে যখন ভৈরবকুমোর আর সনকা দিশেহারা তখন আনন্দী খোঁজ দেয় সেই ‘সবুজ দ্বীপের’ – গোলবাজার – “আমাদের গোলবাজার আছে, আর গোলবাজারে কী- ই না হয় – “ (বেরা, পৃষ্ঠা- ৮৬)   বাইরের জগতটাকে চেনে আনন্দী। সে জানে সুবর্ণরেখার তীরে গড়ে ওঠা এই গ্রামের বাইরে যে দুনিয়া সেখানে হয়তো অসম্ভব শব্দটাই নেই। ‘পেলাসটিক সারজারি’ করে হিজড়াকে পুরুষে বদলে দেওয়াও অসম্ভব নয় বলে আনন্দীর মনে হয়েছে।বাচ্চা জন্মালে যারা ঢোলক কাঁধে নাচে তাদের প্রতিও রয়েছে সহমর্মিতা বোধ। তাদের দেখে মাঝে মাঝে আনন্দীরও ধাঁধাঁ লাগে –

 “ আহা মেয়েলোকই তো, নাকি মেয়ের সাজ দেওয়া এক ‘হিজড়া’, হিজড়া, হিজড়া। … কাদের – কাদের ঘরের আদুরী দুলালী ছিলি মা তুই ?” ১০  

আনন্দীকে তার পরিবার দূরে সরিয়ে দেয়নি, কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার, অপমানিত হওয়ার যন্ত্রনায় সে ঐ ঢোলক কাঁধে করে হেঁটে যাওয়া হেমামালিনী,শ্রীদেবীর সঙ্গে এক হয়ে গেছে। তাই মোরগ লড়াইয়ে জিতে প্রহ্লাদ খুশি হয়ে তাকে মাংস দিলে বিশ্বাস করতে তার সময় লাগে। সেই আনন্দ – বিস্ময় ফুটে ওঠে তাঁর কথায় – “ পেহ্লাদ আমাকে এই ‘পাহুড়ে’র ঠ্যাঙটা উপহার দিল বউদি – আমি হাসব না কাঁদব গো !”১১   

বাংলা সাহিত্যে তৃতীয় লিঙ্গসত্তা, রূপান্তরকামিতা নিয়ে লেখা হয়েছে বিভিন্ন উপন্যাস, গল্প। শ্রীপান্থের লেখা হারেম , সমরেশ বসুর বান্দা , সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মায়ামৃদঙ্গ , নবনীতা দেবসেনের বাপ রে বাপ , কবিতা সিংহের পৌরুষ , স্বপ্নময় চক্রবর্তীর হলদে গোলাপ , বাণী বসুর স্বপ্নময়  ইত্যাদির নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। বিভিন্ন উপন্যাসের বক্তব্য বিষয় আলাদা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই হিজড়াদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন, খোলের নিয়ম কানুন ইত্যাদির সাথে যৌনতা, শরীরি প্রেমের প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে। সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা বিরল বর্ষণ উপন্যাসে অস্তিত্বরক্ষার জন্য মঙ্গলা বাধ্য হয়ে ধরেছে হিজড়ার ছদ্মবেশ ! নাসিমা আনিস রচিত মোহিনীর থান উপন্যাস গুরুমা মোহিনীর মাতৃত্বের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণের কাহিনী। পালিতা কন্যা দিশার কন্যাসন্তান জন্মানোর মধ্যে দিয়ে মোহিনীর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। ফিরে আসা যাক আনন্দীর কথায় ! আলোচ্য উপন্যাসে আনন্দীর লড়াইকে দেখানো হয়েছে অন্য প্রেক্ষিতে। সে নিজের তথাকথিত অসম্পূর্ণতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে পরিবারেই। রূপান্তরকামী চেতনা তাকে আদৌ পীড়িত করেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সে শুধু চেয়েছে টুসুর মা হতে ! আবার ফুপুর কামনার পরীক্ষাতেও কোনরকমে উতরে যেতে চেয়েছে ! সমাজ কুঁদা গড়তে দেবেনা তাই সে হয়েছে মুরগিবাবু। শুধু তাই নয় ! শীতকালে মকরপরবের আগ দিয়ে মশক বেচে নারকেল কিনবে – “ লড়াকু নারকেল, পাথরের মতো শক্ত, গোলগোল, দু-মুখো ছুঁচলো, হাজার ঠোকাঠুকিতেও ভাঙবে না – অজেয় অপরাজিত ।“১২ – বেচবে সে টুসু পরবে নারকেল লড়াইএর জন্য। হাত পেতে ভিক্ষে করবে না আনন্দী। নিজের শ্রমের মূল্যেই সে উৎসবের দিনে ছোটদের কিনে দেবে জামা-পেন্টুল, কিনে আনবে বোম্বাই লাড়ু, মেটাবে নিজের সখ শৌখিনতা। ঔপন্যাসিক আনন্দীকে দয়ার পাত্র করে গড়ে তোলেননি।

জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত লিঙ্গচিহ্নের মানুষ সংখ্যায় নিতান্তই কম – অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলছে। এদের সাথে তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন তারাও যারা রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত হয়েছেন। ভারতীয় সংস্কৃতিতে তারা আজও পরিচিত হন ‘হিজড়া’ বলেই। অতীতের দিকে তাকালে তাদের যন্ত্রনাময় ইতিহাসের কথা জানা যায়। জন্মগত ভাবে যৌন প্রতিবন্ধী ছাড়াও রাজা রাজরাদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য খোজাকরনের সত্য বিবৃত হয়েছে বিভিন্ন পর্যটকের বিবরণে, প্রবন্ধে, ঐতিহাসিক দস্তাবেজে। নবাবের হারেম হোক বা গুরুমায়ের খোল – মধ্যযুগ হোক বা বৃটিশ শাসন – তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। উপরন্তু ১৮৭১ সালে বৃটিশ সরকার যে ফরমান জারি করেন তাতে তাদের বেঁচে থাকা একরকম অসম্ভব হয়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রতিবাদ – আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পায়  ২০১৪ সালের ১৪ই এপ্রিল – সুপ্রিমকোর্ট তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণের পক্ষে মত দেন। এর মধ্যে দিয়ে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমান অধিকারের দাবীকে আরো মজবুত করার কথা বলা হয় ঠিকই কিন্তু মূলস্রোতের অবজ্ঞা, উপহাসের পাত্র হয়ে তারা রয়ে গেছে আজও। শিক্ষিত হয়ে , আর্থিকভাবে স্বাধীন হয়েও নিস্তার নেই তাদের। সমাজের বাঁকা চোখ তাদের স্ক্যান করে চলেছে – না পুরুষ না নারী –  হিজড়ে, মেয়েলী পুরুষ, পুরুষালি মহিলায় তাদের শ্রেণি নির্দেশ করে চলেছে সচেতন ভাবে।

আনন্দীর ক্ষেত্রে  ব্যাতিক্রমী মনোভাবের প্রশ্ন অবান্তর – শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত সমাজ হোক বা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা গোষ্ঠীজীবন – নিয়ম সবক্ষেত্রে এক। জুডিথ বাটলারের বীক্ষণে ধরা পড়েছে এর কারণ –

In as much as “identity “ is assured through the stabilizing concepts of sex, gender, and sexuality, the very notion of “the person” is called into question by the cultural emergence of those “incoherent” or “discontinuous” gendered beings who appear to be persons but who fail to conform to the gendered norms of cultural intelligibility by which persons are defined. ১৩

উপন্যাসের শুরুতেই লেখক  আনন্দীর লিঙ্গ পরিচিতি নিয়ে সমাজের স্ববিরোধী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। কখনো তাকে বলা হয়েছে – “ মুখপুড়ি, তুই কি মেয়ে নাকি যে শাড়ি -চুড়ি – সেমিজ পরবি।“১৪ আবার কখনো সে হয় আন্দী রাঁড়ী, কখনোবা ‘মাকুন্দ মাকুন্দ…মরদ’ ! কিন্তু স্ববিরোধী বলা  ভুল হল ! আসলে আনন্দী যে মেয়ে বা মরদ কোনোটাই নয় – এই  ঠাট্টার মধ্যেই ‘অপর’এর প্রতি মূলস্রোতের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই  ‘সোমত্ত দেওর’ হলে আনন্দীকে  বড়বুড়ির কলঙ্কের কথা  বলতে বাধত সনেকার ! কিন্তু না পুরুষ না নারী আনন্দীর কাছে বলতে তার বাধেনি। বুক হালকা করতে আনন্দী তখন হয়ে উঠেছে একান্ত আপন।

            সমাজ,পরিবার, প্রেম – পরিক্রমায় বাকি থেকে গেছে ‘মডান পয়েট’ ললিন কবিয়ালের কথা – আনন্দীর মতো ললিন কবিয়ালও হয়তো খুঁজে চলেছে তার পরিচয় ! মর্ডান পোয়েট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিচয় ! আধুনিক কবিতার মানে বোঝাতে কবিয়ালের মানে লাগলেও আনন্দীর স্বাভাবিক বুদ্ধি বলে – “কবি হিসাবে ললিন কবিয়াল একটু ‘কমা’ আছে”। কাশীদাসী মহাভারতের মতো তাদের জাতের মহাভারত রচনায়  কবিয়ালকে উৎসাহিত করেছে। ললিনের দুর্বোধ্য কবিতার সমালোচনায়ও সে মুখর। আনন্দী  সূর্য পৃথিবীর অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্ত হলেও একথা তার বুঝতে বাকি থাকেনা যে সমাজের প্রান্তে থাকা মানুষদের কথা বলা হয়নি আজও ! যে মহাভারত কাশীরাম দাস রচনা করেছেন তাতে প্রান্তিক মানুষরা প্রান্তেই থেকে থেকে গেছে ! কবি হিসাবে ললিন একটু ‘কমা’ ঠিকই  – তবু তারা এক সমাজের অংশ। তাই জাতের মহাভরত রচনায় ললিন কবিয়ালই তার একমাত্র সহায়। আনন্দীর এই শ্রেণীচেতনাকেও লেখক তুলে ধরেছেন।

“হামাদের টুসুর একটি ছাইলা কুলতলা বৈ খেলে না, কুলতলা বৈ খেলে না –

কোন সতীনে ধুলা দিল লো ধুলার চিহ্নৎ গেল না – “ ১৫

মকরের টুসু পরব – আনন্দীর স্বপ্ন – টুসুর মা হবে আনন্দী। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন হিজড়া, নপুংসক, খোজা, রূপান্তরকামী, তৃতীয় লিঙ্গ, হারমাফ্রোডাইট  যে শব্দেই লিঙ্গত্রুটি যুক্ত সত্তাদের চিহ্নিত করা হোক না কেন এই শব্দগুলো তাদের প্রজননে অক্ষমতা বা যৌন অস্বাভাবিকতার ( বিসমকামিতার বিপরীতে ) দিকে ইঙ্গিত করে তাদের সামাজিক পরিচিতিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। গোপনীয়তা, ভয় বা কুসংস্কারের একটা ঘেরাটোপে সমাজ যেমন তাদের ঢেকে রাখতে চায় তেমনি সমাজকেও তারা বোকা বানাতে চায় ঐ একই বিষয়গুলোকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করে। তবে যারা আনন্দীর মতো অর্থাৎ গুরুমায়ের খোল যাদের গন্তব্য নয় তারা ? নিজের সমাজেই তারা হয়ে ওঠে বিদ্রূপের পাত্র। ‘কিছু একটা হয়ে ওঠার’ তীব্র ইচ্ছা থেকেই মাটির পুতুল – টুসুর মা হওয়ার বাসনা। আনন্দীর কিডব্যাগে আছে টুসুর মা সাজার সরঞ্জাম – সিন্থেটিক শাড়ি, লিপস্টিক, কানপাশা, পাউডার, আয়না, কাকই ! টুসুকে সাজাবে নাকছাবিতে আর নিজেও সাজবে সে। ভ্রমর, ভাস্বতী, শৈল – যারা পরিপূর্ণ নারী, তাদের কাছ থেকে মৌখিক ভাবে আদায় করে নেবে  টুসুর মা হওয়ার পারমিট। প্রয়োজনে ঘুষ দিতেও রাজি সে! ভ্রমরের জন্য গোলবাজার থেকে কেনা নকলি বিছাহার আর টুসুর জন্য কেনা নাকছাবি – এর বদলে তারা আনন্দীকে অনুমতি দিক শুধু এক রাতের জন্য টুসুর মা হতে ! পরিণতি –

“ হাসতে হাসতে বেদম হয়ে আনন্দীর চুল ঘেঁটে দিল শৈল, মুনকুরা। চোখের কাজল মুখের লিপ্সটিক গুলিয়ে হান্ডুল – মান্ডুল করে ছাড়ল মুখময়।…টুসুর গান ছাপিয়েও উপরে উঠলতাদের হাসি, হৈ – হট্টরোল। তারা তাদের দল থেকে টুসু-ঘর থেকে ঘরের চৌহদ্দি থাকে খেদিয়ে দিল আনন্দীকে। “ ১৬  

না পুরুষ না নারী আনন্দী তার অসম্পূর্ণতার বেদনায় অনুভব করেছে এক কঠিন সত্য – “আসলে একটা কিছুর ‘সাপোটার’ না-হয়ে পৃথিবীতে ঠিকমতো বাঁচা যায় না।“১৭  তাই সে পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠার জন্য টুসুর মা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু সমাজ খারিজ করেছে এই আবেদনও।   

কোনো কোনো সমালোচক ‘হিজড়া’ শব্দে পরিচিতি নয় একটি পেশাকে বোঝাতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে রয়েছে মতভেদও। পেশা হোক বা পরিচিতি – একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সমাজে তারা ব্রাত্য – অপর ! কিন্তু তাদের প্রতিবাদের স্বর আজ সমাজ শুনতে বাধ্য হচ্ছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, সেমিনারে আলোচিত হচ্ছে তাদের চাহিদা – প্রাপ্তি – অপ্রাপ্তির ক্ষেত্রগুলি। মনোবৈজ্ঞানিক – সামাজিক বিভিন্ন তত্ত্বের আধারে প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে ফেলার চেষ্টাও চলছে পুরোদমে। সেই প্রচেষ্টারই আর এক রূপ আমাদের দেখালেন শ্রী নলিনী বেরা। উপন্যাসের শেষে আনন্দীকে হেরে যাওয়া, বিধ্বস্ত এক মানুষ হিসাবে দেখানো হয়নি বরং ঔপন্যাসিকের বর্ণ্নায় – “ হ্যাঁচকা-টানে সোলপারের মাঠ থেকে বিস্তৃত বিষন্নতা থেকে নিজেকে উঠিয়ে ফেলল আনন্দী “১৮। এগিয়ে যাওয়াই যখন জীবন তখন আনন্দী এগোবে – গোলবাজারের দিকে – বন্ধু নিতাই কবিয়ালের দিকে – কর্মব্যস্ত জগতের দিকে। না পুরুষ না নারী হয়েও সে বাঁচবে। স্বনির্ভর আনন্দী এভাবেই খুঁজে নেবে ভালোভাবে বেঁচে থাকার পথ।                                                    

তথ্যসূত্র

১ Judith,Butler:Gender Trouble, Routledge,New York, 2013, page. 8  

নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.৫৬   

৩ তদেব, পৃ.৫০

তদেব, পৃ.১২

৫  Judith,Butler:Gender Trouble, Routledge,New York, 2013, page. 10

 ৬ নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ৯৫   

http://shodhganga.inflibnet.ac.in:8080/jspui/handle/10603/199925

৮ নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.১০    

 ৯ স্বপ্নময়,চক্রবর্তী:হলদে গোলাপ, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০১৫, পৃ. ৩২৯   

১০ নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ৮২   

 ১১ তদেব, পৃ.৭৫  

১২ তদেব, পৃ. ৮০

১৩ Judith,Butler:Gender Trouble, Routledge,New York, 2013, page. 23  

 ১৪ নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ৯   

 ১৫ তদেব, পৃ. ৯৩  

১৬ তদেব, পৃ. ৯৫

১৭ তদেব, পৃ. ৬৪

১৮ তদেব, পৃ. ৯৬  

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী

বাংলা :

ঋতু,সেন চৌধুরী (সম্পা):নারীবাদের নানা পাঠ, আনন্দ,কলকাতা,২০২১

নলিনী,বেরা:অপৌরুষেয়, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০০৭

নীহার,মজুমদার:হিজড়ে সমাজ-মানবিক অনুসন্ধান,সাহিত্য প্রকাশ,কলকাতা,২০০৫

স্বপ্নময়,চক্রবর্তী:হলদে গোলাপ, দে’জ পাবলিশিং,কলকাতা, ২০১৫

ইংরাজি :

Judith,Butler:Gender Trouble, Routledge,New York, 2013

A,Revati:The Truth About Me-A Hijra Life Story,Penguin,India,2010

আন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত প্রবন্ধ

Dangapara(Near Vivekananda Stadium), P.O- Rahara, North 24Parganas, Pin- 700118, Phone no: 9051655145, Email id: sinha.dhriti@gmail.com, https://www.iosrjournals.org/iosr-jhss/papers/Vol.%2021%20Issue5/Version-4/C2105041218.pdf

https://www.indjsp.org/text.asp?2018/34/1/79/228791

http://shodhganga.inflibnet.ac.in:8080/jspui/handle/10603/199925